মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে অভিষেকের পর লেনদেনের শুরুতেই অস্বাভাবিক বাড়ছে নতুন প্রতিষ্ঠান বা ‘এন’ ক্যাটাগরির শেয়ার। এসব কোম্পানির শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও শুরু হয়েছে একধরনের প্রতিযোগিতা। ফলে দ্রুত অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ছে এসব শেয়ার। যে কারণে ঝুঁকি বাড়ছে এসব শেয়ারে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারপ্রতি মূল্য-আয় অনুপাতের ভিত্তিতে সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছে বাজারে নতুন আসা ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠান ‘এন’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের পিই রেশিও ভিন্ন ভিন্ন হলেও গড় পিই অনুযায়ী সবগুলো শেয়ারই অতিমূল্যায়িত। হিসাব অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ‘জেড’ ক্যাটাগরির চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে ‘এন’ ক্যাটাগরির শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত প্রায় ৪১।
বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, সম্প্রতি বাজারে আসা বিবিএস কেব্লসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। শুরুতে ১০ টাকা অভিহিত দরের শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৫৮ টাকার মধ্যে। পরবর্তী সময়ে আবার কমতে শুরু করেছে এসব শেয়ারের দর। শুরুতেই বেশি দরে এসব শেয়ার কেনায় এখন এগুলো অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে। ফলে এখন খেসারত দিতে হচ্ছে সেই ভুলের।
এ প্রসঙ্গে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা-নূর-ই নাহারীন বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের উচিত নতুন-পুরোনো যেকোনো শেয়ার কেনার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া। যদি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেশি হতে পারে। তবে সেটা যেন অতিমূল্যায়িত না হয়, সেদিকেও তাদের নজর রাখা দরকার।’
সাধারণত একটি কোম্পানির পিই রেশিও যখন ১৫-এর বেশি হয়ে যায়, তখন সে কোম্পানিতে বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসাবে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণই। সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ পিই থাকার পরও বিনিয়োগকারীদের কাছে যদি ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সংবেদনশীল তথ্য থাকে তখন তারা সেখানে বিনিয়োগ করে থাকেন। তাদের মতে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানের পিই ২০ হলেও সেটা মানানসই বলা যায়। তবে এরপর পিই অনুযায়ী ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তবে কোনো অবস্থায় এটা ৪০-এর বেশি হওয়া উচিত নয় বলে জানান তারা। এমন শেয়ার বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলেই ৪০-এর ওপরে পিই গেলেই মার্জিন ঋণ সুবিধা হারায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এর আগে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও বাজারে এসেই অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে। বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েই ফরচুন শুজের শেয়ারের দর ৬০ টাকা অতিক্রম করে। ১০ টাকা অভিহিত দরের শেয়ারের এত চড়া মূল্যের পরও একশ্রেণির বিনিয়োগকারী এ শেয়ার কিনতে মরিয়া হয়ে ওঠে। পরবর্তী কিছুদিনের মধ্যেই এ শেয়ার ৪০ টাকায় নেমে আসে। ফলে এ শেয়ার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। লেনদেনের শুরুর দিন রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার ২৩ টাকায় কেনাবেচা হয়। পরবর্তী সময়ে যা ১১ টাকায় নেমে আসে। একইভাবে সিমটেক্সের শেয়ার ২৬ টাকা থেকে দ্রæত ১৮ টাকায় নেমে আসে। অন্যদিকে বাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম দিকে কেডিএসের শেয়ার ৮৯ টাকায় চলে যায়, যা পরে ৫৪ টাকায় নেমে আসে। একইভাবে নতুন আসা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হয় বিনিয়োগকারীদের।
ঝুঁকির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার। এসব শেয়ারের গড় পিই ৩০। অর্থাৎ ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এন’ ক্যাটাগরিতে ঝুঁকি ১১ শতাংশের বেশি। এছাড়া ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ারের পিই ২৭ দশমিক ৪০ এবং ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারের পিই ১৬ দশমিক ১০-এ অবস্থান করছে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, পুঁজিবাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন শুরু আগে এর দরবৃদ্ধির জন্য বিভিন্নভাবে গুজব ছড়ানো হয়। তাই বিনিয়োগকারীদের এসব বিষয় মাথা না রেখে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করা উচিত। কোনো গ্রুপের যদি অন্য একটি প্রতিষ্ঠান আগেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত থাকে সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন প্রতিষ্ঠানের তুলনা করা ঠিক নয়। কারণ গ্রুপ এক হলেও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন। তাই বিনিয়োগকারীদের নজর থাকা দরকার ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থায়। এটা দেখেই শেয়ারের দর নির্ধারণ হওয়া উচিত।