Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 11:13 am

ঝুলে গেছে ভারতের পুরোনো ইঞ্জিন লিজ আনার উদ্যোগ!

ইসমাইল আলী: ভারতের অব্যবহৃত ও পুরোনো ২০টি ইঞ্জিন ভাড়ায় দুবছরের জন্য লিজ (ইজারা) আনার উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ইঞ্জিনগুলো বিনা ভাড়ায় দিতে রাজি হয় ভারত। গত অক্টোবরে এসব ইঞ্জিন দেশে আসার কথা ছিল। তবে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এ কার্যক্রমের গতি নেই।

সূত্রমতে, ভারত থেকে ইঞ্জিন ভাড়ায় আনার জন্য গত জুনে দেশটি সফরে যান রেলওয়ে কর্মকর্তারা। সে সময় এক বছরের জন্য ভাড়ায় ও এক বছরের জন্য বিনা ভাড়ায় ২০টি পুরোনো ইঞ্জিন সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর আগে দুদেশের রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে মৌখিক আলোচনা হয়।

সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের ভারত সফরের সময় বিনা ভাড়ায় ইঞ্জিন আনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, অক্টোবরে ভারত থেকে ২০টি ইঞ্জিন আসতে পারে। এর মধ্যে ১০টি ব্রডগেজ ও ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন।

তিনি বলেন, রেলে ইঞ্জিন সংকট রয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে ইঞ্জিন কেনার প্রকল্প চলমান। তবে সেগুলো আসবে ২০২২ সাল নাগাদ। এ সময়টায় সংকট কাটাতে ভারতের কাছে কিছু ইঞ্জিন বিক্রি অথবা ভাড়ায় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারত বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ২০টি ইঞ্জিন বিনা ভাড়ায় দিতে রাজি হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় ওই ইঞ্জিনগুলো হস্তান্তর করা হবে।

যদিও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ইঞ্জিনগুলো হস্তান্তর করা হয়নি। এরপর আরও তিন মাস পেরুলেও ইঞ্জিনগুলো দেশে আসেনি। কবে নাগাদ ভারতের ইঞ্জিন আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। ইঞ্জিন সরবরাহে দুদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তাও হয়নি।

রেলপথমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ভারত থেকে ইঞ্জিন আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সম্প্রতি ইঞ্জিন আনার বিষয়ে কারিগরি দিকগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য রেলওয়ের একটি দল ভারত সফরে গিয়েছিল। তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। রেলপথমন্ত্রী বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি দেশে এলে ইঞ্জিনগুলো আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী মাসে এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

সূত্রমতে, ১১০টি ইঞ্জিন কেনার জন্য গত বছর দুটি চুক্তি করেছে রেলওয়ে। এর মধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণের (বায়ার্স ক্রেডিট) ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে। আর এডিবির ঋণে কেনা হচ্ছে ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণে আরও ১০টি ইঞ্জিন কেনার প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবে এসব ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত হতে কমপক্ষে দুবছর লাগবে।

এডিবির ঋণে কেনার প্রক্রিয়াধীন ইঞ্জিনের অগ্রগতি দেখতে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র গেছেন রেলমন্ত্রী। দেশটির প্রগ্রেস রেল লোকোমোটিভ কোম্পানির আমন্ত্রণে রেলমন্ত্রী এ সফরে গেলেন। তার সঙ্গে রয়েছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তথ্যমতে, বর্তমানে রেলওয়ের সচল ইঞ্জিন রয়েছে ২৭৩টি। এসব ইঞ্জিন দিয়ে সারা দেশে ৩৪৫ যাত্রীবাহী এবং বেশ কয়েকটি পণ্যবাহী ও তেলবাহী ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম ইঞ্জিন থাকায় প্রায়ই রেলের সেবা বিঘ্নিত হয়। এসব ইঞ্জিনের মধ্যে আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া তথা ২০ বছরের বেশি বয়সী রয়েছে ১৯৫টি। এগুলোর বয়স ২১ থেকে ৬৫ বছর। মাত্র ৭৮টির আয়ুষ্কাল ২০ বছরের কম।

রেলওয়ের ৭২ শতাংশ ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে ৫০ শতাংশ ইঞ্জিন ওভারহলিং করা হয়নি। এছাড়া বেশ কয়েক বছর রেলবহরে যুক্ত হয়নি নতুন কোনো ইঞ্জিন। যদিও এর মধ্যে নতুন কোচ যুক্ত হয়েছে ২৭০টি। আরও নতুন ৭৫০টি কোচ কেনার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এতে ইঞ্জিন সংকটে পড়েছে রেলওয়ে।

যদিও দ্রুতই ভারতের ইঞ্জিন আসার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ভারতের এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ইস্যু নিয়ে দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা টানাপড়েন চলছে। এরই মধ্যে ভারত সফর বাতিল করেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। এ অবস্থায় কবে নাগাদ ভারতের ইঞ্জিন আসবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এছাড়া গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।