ঘূর্ণিঝড় রেমালে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন-বিতরণ

বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল দেশের বড় একটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয় এ কারণে। প্রায় কয়েক কোটি মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যদিও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে ছিল। এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে যায় তিন হাজার ৭৫০ মেগাওয়াটে, যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৩ লাখ ২১ হাজার সংযোগ আবার দেয়া হয়েছে। আর বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১টি সংযোগ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে ছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আরইবির ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৬৫টি সমিতির আংশিক বা পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩০টি সমিতির আওতায় বিদ্যুতের দুই হাজার ৭১৮টি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া দুই হাজার ৩৬৩টি ট্রান্সফরমার বিনষ্ট হয়েছে, ইনসুলেটর ভেঙেছে ২২ হাজার ৮৮৬টি, মিটার বিনষ্ট হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৬৫টি। এছাড়া স্প্যান (তার ছেঁড়া) হয়েছে ৭১ হাজার ৮৬২টি পয়েন্টে। সার্বিকভাবে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি ৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

এদিকে ওজোপাডিকোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিদ্যুতের খুঁটি নষ্ট হয়েছে ২০টি, হেলে পড়েছে ১৩৫টি, তার ছিঁড়ে গেছে প্রায় ২৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার। এছাড়া ১১ কেভি পোল ফিটিংস বিনষ্ট হয়েছে ১৪২ সেট, ট্রান্সফরমার বিনষ্ট হয়েছে ১২টি ও ১১ কেভি ইনসুলেটর বিনষ্ট হয়েছে ১৩৪টি।

যদিও ঘূর্ণিঝড় চলমান থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিকভাবে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাগণের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করে ক্ষয়ক্ষতির প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পরিস্থিতি তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা পর্যায় ও সমিতিভিত্তিক কন্ট্রোল রুম রয়েছে। পরিবহন ঠিকাদারকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এখানে কোনো ক্ষতি হয়নি। এখন সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আরইবি ও ওজোপাডিকোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আরইবি ও ওজোপাডিকোর লোকজন প্রয়োজনীয় মালামালসহ প্রস্তুত রয়েছেন। ঝড় বা বাতাস কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হবে।

এদিকে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গতকাল বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক কমিয়ে দেয়া হয়। গতকাল রাত ১২টায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৭১৫ মেগাওয়াট। রাত ১টায় তা কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ২০ মেগাওয়াট, ২টায় ১১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট ও ৩টায় ৯ হাজার ৯৩০ মেগাওয়াট। পরে তা আরও কমতে থাকে। এতে ভোর ৫টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় আট হাজার ৫৬ মেগাওয়াট, সকাল ৬টায় সাত হাজার ৭৫ ও ৭টায় ছয় হাজার ৩৪ মেগাওয়াট।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সকাল ৮টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৫৫৩ মেগাওয়াট। বেলা ১১টায় তা আরও কমে দাঁড়ায় চার হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট, যা বেলা ৩টায় নামে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াটে। বিকাল ৪টায় তা আরও কমে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৮৬ মেগাওয়াট ও ৫টায় তিন হাজার ৭৫১ মেগাওয়াট। এটি ছিল গতকাল দিনের সর্বনিম্ন উৎপাদন।

এরপর বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা করে বাড়ানো হয়। সন্ধ্যা ৬টায় উৎপাদন করা হয় তিন হাজার ৮৪৭ মেগাওয়াট, ৭টায় চার হাজার ৯৭ মেগাওয়াট ও ৮টায় চার হাজার ১৫৭ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নামায় গতকাল সারাদিনই দেশব্যাপী ব্যাপক লোডশেডিং হয়। এজন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ অফিসগুলোয় ফোন করে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০