সারা বিশ্বে যত রুটিন অস্ত্রোপচার হয়, তার শীর্ষে রয়েছে টনসিল। এই অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করা হয়। অস্ত্রোপচার করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে মুখের ভেতর দিয়ে টনসিল দুটি বের করা হয়। টনসিল অপারেশনের পর শিশু বা রোগীর কিছু বিশেষ যতেœর দরকার হয়।
খাবার: অস্ত্রোপচারের পর রোগী অজ্ঞান অবস্থার প্রভাব থেকে মুক্ত হলে, অর্থাৎ চার ঘণ্টা পর রোগীকে মুখে খাবার দেয়া যাবে। প্রথমে ঠাণ্ডা খাবার যেমন চামচ দিয়ে আইসক্রিম অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে এবং সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি বা ঠাণ্ডা জুস খেতে দিতে হবে। অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টা পর আর আইসক্রিম খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে খাবার খাওয়ার পর রোগীকে ঠাণ্ডা পানিতে পরিমাণমতো মাউথওয়াশ মিশিয়ে কুলি গড়গড়া করাবেন, যেন খাবার মুখে জমে না থাকে।
পানিশূন্যতা এড়াতে অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে, যা ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। যেসব খাবার চিবানো ও গিলতে সহজ যেমন দুধে ভিজিয়ে নরম পাউরুটি, জাউভাত বা নরম খিচুড়ি, সেমাই, ফিরনি, স্যুপ প্রভৃতি রোগীকে প্রথম সাত দিন খেতে দিতে হবে। শক্ত, মসলাদার ও গরম খাবার (যেমন চানাচুর, ফুচকা, শক্ত পিঠা, সমুচা, মাংসের হাড়, কাঁটাজাতীয় মাছ) প্রথম সাত দিন এড়িয়ে চলুন।
অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা: মুখের ভেতরে ক্ষতস্থান যেহেতু বিশ্রাম পায় না, তাই নাক, কান ও গলার অন্যান্য অস্ত্রোপচারের তুলনায় টনসিলের অস্ত্রোপচারে ব্যথা বেশি হয়। এই ব্যথা বয়সভেদে ১০-১৪ দিন থাকতে পারে। এজন্য সাধারণত ভালো মানের ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। এরপরও বেশি ব্যথা হলে পায়ুপথে সাপোজিটরি ব্যবহার করা যায়।
অস্ত্রোপচারের পর রক্তপাত: অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টা পর থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের স্থান থেকে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি তিন থেকে পাঁচ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে হতে পারে। ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত একধরনের পোস্টটনসিলেক্টমি হেমোরেজ।
সঠিক নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সব ডোজ সেবন না করলে, মুখ পরিষ্কার না রাখলে, নিয়মমতো ওষুধ দিয়ে গড়গড়া না করলে বা শক্ত খাবার খেলে অস্ত্রোপচারের স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমন হলে ভয় না পেয়ে দ্রুত চিকিৎসক অথবা নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ
রেজিস্ট্রার, নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল