টনে তিন হাজার টাকা কমল জাহাজ ভাঙা স্ক্র্যাপের দাম

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ইস্পাত খাতের প্রধান কাঁচামাল পুরোনো জাহাজের স্ক্র্যাপের দাম টনপ্রতি কমেছে তিন হাজার টাকা। চলতি মাসের শুরুতে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগে প্রতিটন ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকায়। যদিও করোনার প্রভাবে গত এক বছরের ব্যবধানে স্ক্র্যাপের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর ভালো মুনাফা হওয়ায় এবার রেকর্ডসংখ্যক জাহাজ ভাঙা হয়েছে। তবে স্ক্র্যাপের দাম কমলেও রডের দাম এখনও কমায়নি ইস্পাত কোম্পানিগুলো।

জানা যায়, চলতি মাসে আভ্যন্তরীণ বাজারে পুরোনো জাহাজের স্ক্র্যাপের চাহিদা কম থাকায় কমছে দাম। বর্তমানে প্রতিটন মেটিং স্ক্র্যাপ ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ১০ দিন আগে ছিল ৫১ হাজার টাকা। তবে দাম কমার প্রভাব পড়েনি রড-অ্যাঙ্গেলের বাজারে। মান ও কোম্পানিভেদে উৎপাদিত ইস্পাত পণ্যের দাম বর্তমানে টনপ্রতি ৭২ থেকে ৭৪ হাজার টাকা। স্ক্র্যাপের দাম কমায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা। তবে দেশে পুরোনো জাহাজ আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং চাহিদা কম থাকায় দাম আরও কমার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও গত এক বছর স্ক্র্যাপের দাম বাড়তির দিকে ছিল।

মূলত করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পুরোনো জাহাজের দাম বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে যায়। এ দাম স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে বলে উদ্যোক্তারা জানান। কভিড সংক্রমণ শুরুর আগে জাহাজ ভাঙা স্ক্র্যাপের টনপ্রতি দাম ছিল ৪০০ ডলার, যা এখন ৮৯০ ডলারের কাছাকাছি। এ খাতের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ২০-২৫টি পর্যন্ত পুরোনো জাহাজ আনা হতো। কিন্তু করোনার শুরু হওয়ার পর দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় পুরোনো জাহাজ আমদানি কম হয়েছিল। আবার হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে। অথচ করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম কমে যাওয়ায় জাহাজ কাটায় কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হয়।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুরোনো জাহাজ ভাঙার জন্য আনা হয়েছিল ২৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৩টি, মার্চ মাসে ৩৫টি, এপ্রিলে ২৬টি, মে মাসে ২০টি, জুন মাসে ১৯টি, জুলাই মাসে ১৫টি, আগস্টে ২৯টি এবং সেপ্টেম্বর মাসে ২৫টি। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট জাহাজ ভাঙা হয়েছে ২২৫টি। এতে ২১ লাখ ৫৪ হাজার টন স্ক্র্যাপ পাওয়া যায়। এর আগের বছরের পুরোনো জাহাজ ভাঙা হয়েছিল ১২৮টি। এতে ২০ লাখ ৪০ হাজার টন স্ক্র্যাপ পাওয়া যায়।

ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, গত বছরের নভেম্বরে স্ক্র্যাপ সংকটের কারণে টনপ্রতি ইস্পাতের দাম ১৬ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। তবে সম্প্রতি দাম কিছুটা কমেছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ সংকট না থাকায় দাম আরও একটু কমতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। তবে চাহিদা অনুসারে স্ক্র্যাপ সরবরাহ না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে কিছু কিছু ইস্পাত কারখানায়। আবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কোম্পানি ও মানভেদে রডের দাম টনপ্রতি ৭১ হাজার টাকা থেকে ৭৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিএসআরএম ৭৪ হাজার টাকা, কেএসআরএম ৭২ হাজার টাকা এবং জিপিএইচ ইস্পাত ৭১ হাজার ৯০০ টাকা চলছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সাবেক সহসভাপতি এবং মাদার স্টিলের স্বত্বাধিকারী মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, চলতি মাসে পুরোনো জাহাজের স্ক্র্যাপের দাম টনপ্রতি তিন হাজার টাকা কমেছে। আগে ৫১ হাজার টাকায় মেটিং স্ক্র্যাপ বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। মূলত দেশীয় ইস্পাত খারখানায় কাঁচামালের চাহিদা কম থাকায় দাম কমেছে। তবে দাম আরও কমবে কি না, তা মাস শেষে বোঝা যাবে, যদিও আমাদের কস্টিং বেশি। মানে লোকসানে সেল করছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজের দাম কমেনি। তবে পরিস্থিতি বোঝার জন্য এ মুহূর্তে বুকিং বন্ধ রেখেছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০