Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:34 am

টাকার বিপরীতে আরও শক্তিশালী ডলার

শেখ আবু তালেব: এক বছরের ব্যবধানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকার বিনিময় মূল্য ৮১ টাকা ২৯ পয়সা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে লেনদেন হচ্ছে ৮৩ টাকা ৯০ পয়সায়। অর্থাৎ এ সময় টাকার দর বেড়েছে দুই টাকা ৬১ পয়সা বা তিন দশমিক ২১ শতাংশ। ডলার সংকট তীব্র হওয়ায় গত ২০ দিনে তিন দফায় টাকার বিনিময় মূল্য বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চাহিদা মেটাতে বাজারে ডলার ছাড়তে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, আমদানি চাপ গত অর্থবছরের চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমলেও তা কাক্সিক্ষত হারে কমেনি। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস রফতানি ও রেমিট্যান্স থেকেও যা আসছে, তা আমদানি ব্যয়ের চেয়ে কম। ফলে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার ওপর। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে মূল্যায়ন করেছে রুপির দরপতনকে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন হচ্ছে। এ কারণে ভারতীয় রুপির বিপরীতে আরও দুর্বল হচ্ছে টাকা। গত ২৮ অক্টোবর এক রুপির বিপরীতে এক টাকা ১৫ পয়সা পাওয়া যেত, এখন পাওয়া যাচ্ছে এক টাকা ১৯ পয়সা। এই দর সমন্বয় করতে গিয়েই খুব দ্রুতই ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য পরিবর্তন হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্য ছিল ৭৪ ভারতীয় রুপি। বর্তমানে দর কমে বিনিময় হচ্ছে ৭০ দশমিক ৬৬ রুপিতে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য ছিল ৮১ টাকা ২৯ পয়সা। সর্বশেষ গত জুন মাসে তা ছিল ৮৩ টাকা ৭২ পয়সা। গত ৩১ অক্টোবর আন্তঃব্যাংকে এ হার ছিল ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা। এরপর থেকেই ২০ দিনে তিন দফায় দর বাড়ে টাকার।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। অলিখিতভাবে দর নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দল। এ দলটিই সময়ে সময়ে টাকার দর নিয়ন্ত্রণ করে দেয়। কিন্তু ডলারের চাহিদার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে এই দর পুরো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর চাহিদার আলোকে গত ৭, ১৪ ও ২০ নভেম্বরে ডলারের বিপরীতে টাকার দর কমেছে তিন দফায়। সর্বশেষ ২০ নভেম্বরে ব্যাংকগুলো ৮৩ টাকা ৯০ পয়সায় ডলার বিনিময় করেছে।
ডলারের চাহিদা মিটিয়ে দর নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়তে শুরু করেছে। সাতদিনের ব্যবধানে ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় পাঁচ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া বিপিসির দায় মেটাতে গিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ কোটির বেশি ডলার কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ৭ নভেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২১৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১০১ কোটি ডলার। সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বরে তা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১০৪ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।
ডলার বাজারের এমন অস্থিরতা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ডলারের চাহিদা ঠিক রাখতে বাজারে নিয়মিত ডলার ছাড়ে ও সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়েও কিছু ডলার ছাড়তে গিয়ে রিজার্ভে কিছুটা টান পড়েছে। কিন্তু দ্রুত তা পূরণ হয়ে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আলোচিত সময়ে বিপিসির দায় মিটিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রা থেকেই এই দায় মেটানো হয়। এছাড়া বাজারে ডলারের চাহিদা বজায় রাখতে গিয়ে ৬৩৭ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের চেয়ে কিছুটা কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানি হয়েছে এক হাজার ৪৬৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ চলতি বছরেও পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অথচ গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) আমদনি প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশের ওপর।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ২৩১ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল। অথচ এর আগের বছরে ছিল উল্টো চিত্র। এই সময়ে ব্যাংকগুলো থেকে ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল। এর বিপরীতে মাত্র সাড়ে ১৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে।