টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বৃদ্ধির শঙ্কা

শেখ আবু তালেব: আড়াই বছরে ডলারের বিপরীতে ছয় শতাংশ দর হারিয়েছে টাকা। আমদানি ব্যয়ের তুলনায় বাড়েনি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ। এতে ডলার সংকটে পড়েছে ব্যাংক খাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বাজারে ডলার ছেড়ে দর ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। তারপরও স্থির থাকছে না টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের বিনিময় মূল্য ৯০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে খুব দ্রুতই। এতে আমদানি ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। মুদ্রাস্ফীতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে।
টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হচ্ছে পণ্য আমদানির উল্লম্ফনকে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে এতে। টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ শেয়ার বিজকে বলেন, আমদানিতে প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো। কিন্তু আমদানির তুলনায় রফতানি সেভাবে বৃদ্ধি না পেলে ডলারের দাম বাড়বেই। এটা কত বৃদ্ধি পাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিল ৭৮ টাকা ৫১ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তা হয়েছে ৭৯ টাকা ১০ পয়সা ও ডিসেম্বরে হয়েছে ৮২ টাকা ৭০ পয়সা। গত জুন মাস শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৮৩ টাকা ৭০ পয়সা। গতকাল তা দাঁড়িয়েছে ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সায়। কিন্তু কার্ব মার্কেটে (খোলাবাজার) বিনিময় হচ্ছে ৮৫ টাকায়।
অনেক ব্যাংকই ডলারের চাহিদা মেটাতে খোলাবাজার থেকে বেশি দামে কিনছে। এভাবে আড়াই বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচ টাকা ২৪ পয়সা। যা সাড়ে ছয় শতাংশের বেশি। ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার ছেড়েছে বাজারে গত এক বছরে। তারপরও স্থির হচ্ছে না ডলারের বিনিময় মূল্য।
ডলারের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয়কে। ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) এক গবেষণা দেখা গিয়েছে, পুরো বিশ্বে ২০১৭ সালে এলসি খোলার সংখ্যায় বাংলাদেশ প্রথম হয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশ্বরেকর্ড। অতীতে কখনও এমন অস্বাভাবিক চিত্র দেখা যায়নি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) বাংলাদেশের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র পাঁচ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর অর্থবছর শেষে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দুই খাতের প্রবৃদ্ধির যোগফলের প্রায় দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে আমদানি ব্যয় মেটাতে। এতে বাজারে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক ব্যাংকই ডলার সংকটে আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও দুর্বল হওয়ার বিষয়ে এক মত পোষণ করেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদের জোয়াদ্দার। তিনি জানিয়েছেন, যেভাবে আমদানি বাড়ছে তাতে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা দুষ্কর হয়ে পড়বে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান আর কমে যাবে। বর্তমানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৮৪ টাকা হলেও শিগগিরই তা ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে।
এদিকে পণ্য আমদানির অস্বাভাবিক এমন ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণাত্মক। ফলে সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এতে কমতে শুরু করেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এক সময়ে তিন হাজার ৩৪৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন তিন হাজার ২১২ কোটি ৪৭ লাখ ডলারে উপনীত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, টাকার মান কমে যাওয়ায় রফতানিকারকরা কিছুটা লাভবান হবেন। কিন্তু অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন হবে, তা বিশ্লেষণ করা দরকার।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০