টাকার সরবরাহ বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে

শেখ আবু তালেব: ব্যাংকের বাইরে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত মে মাস শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। অপরদিকে অর্থের প্রবাহ বাড়লেও হাতবদলের হার সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থ এখন উৎপাদন খাতে যাচ্ছে না। ব্যক্তিপর্যায়ে টাকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। এই চিত্রই অর্থনীতির স্থবিরতা জানান দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মে মাসে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে প্রবাহিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, এক মাস আগেও যা ছিল এক লাখ ৭৭ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এই পরিমাণ অর্থ ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে চলে গেছে। এক বছরের হিসাবে ব্যাংক থেকে অর্থ বেরিয়ে যাওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ দশমিক ৭১ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দেড় বছরে এমনটি ঘটেনি। সাধারণত এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে অর্থের প্রবাহ একটু বেশি হয়। কিন্তু ব্যবধান এত বেশি হয়নি। এবারই এত ব্যবধান হয়েছে।

অপরদিকে মে মাস শেষে ব্যাপক মুদ্রা বা এম২ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, গত এপ্রিলে যা ছিল ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে এক দশমিক ৯৩ শতাংশ। এম২-তে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি অনুযায়ী এই সময়ে ব্যাপক মুদ্রা প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ। অর্থাৎ অর্থের সরবরাহ যেভাবে বেড়েছে তার বিপরীতে হাতবদল হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধির সঙ্গে অর্থ হাতবদল হওয়ার হার যদি বৃদ্ধি না পায়, তাহলে মানি ভেলোসিটি কমে যাওয়া ধরা হয়। অর্থাৎ অর্থ কোথাও জমা হচ্ছে। উৎপাদন বা ব্যবসায় অর্থ যাচ্ছে না। ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে রয়েছে।

অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী, অর্থের হাতবদলের হারের ওপর অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য নির্ভর করে। অর্থ যত বেশি হাতবদল হবে, অর্থনীতি ততই চাঙা হবে। হাতবদল কাক্সিক্ষত হারে না হলে এ অর্থ ব্যাংক ব্যবস্থায় ফিরে আসতে দেরি হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাজারে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে মূলত আমদানি ব্যয় কমে যাওয়া ও রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য অর্থের প্রবাহ বেড়েছে।

কয়েকজন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যাংক ব্যবস্থায় ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল থাকলেও খোলা বাজারে কিন্তু নেই। ডলারে দাম বাড়ছে। এখন এই অর্থ হুন্ডি বা অন্য কোনোভাবে ডলারে রূপান্তরিত হয়ে দেশের বাইরে গেলে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক হবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মানসুর বলেন, মূলত বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি হয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতিতে তেমন প্রভাব বিস্তার করবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মে শেষে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছিল পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০