Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:07 pm

কর অঞ্চল-১২, ঢাকায় ‘টাকা-তদবির’ ছাড়াই যোগ্যতায় নিয়োগ পেলেন ৩৩ জন

** নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা আর মোবাইল নাম্বার দেয়া হয় গোয়েন্দা সংস্থাকে
** নয় দিনে নিয়োগ শেষ, নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্তদের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা
** প্রত্যেক দিনের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ওইদিনই ফলাফল প্রকাশ করা হয়
** নজিরবিহীন নিয়োগ বলছেন নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়োগের সাথে সংশ্লিষ্টরা
** ভালো ও স্বচ্ছ নিয়োগ না হলে একটি অর্গানাইজেশনকে ৩০-৩২ বছর ধরে ভুগতে হয়-এনবিআর চেয়ারম্যান

রহমত রহমান : সরকারি চাকরিতে নিয়োগ মানেই লেনদেন হবে টাকা। সঙ্গে থাকবে সর্বোচ্চ জায়গা থেকে তদবির। আবার মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে একজনের পরীক্ষা দেবে আরেক জন। মেধা আর যোগ্যতা না থাকলেও হবে চাকরি। সঙ্গে নিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের আত্মীয়, স্বজনের নাম করে সুপারিশ তো থাকবেই। আরো শর্টকার্ট হলো-মেধা না থাকলেও টাকা দিয়ে এমসিকিউ’র উত্তর কিনে পরীক্ষা দিয়ে হবে চাকরি। স্বচ্ছ নিয়োগ তো হবেই না। বরং অস্বচ্ছ এই নিয়োগে অযোগ্য আর মেধাহীনরা পাবেন নিয়োগ। এদের থেকে সঠিক সেবা আশা করা গুড়ে বালি। আবার নিয়োগ ঝুলে থাকবে কয়েক বছর। সব ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে কর্মচারী নিয়োগে ‘মডলে ও দৃষ্টান্ত স্থাপন’ করেছে কর অঞ্চল-১২। মাত্র ‘নয় দিনে’ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।

এমসিকিউ নয়, লিখিত পরীক্ষা আর ‘তুমুল প্রতিযোগিতার’ মধ্য দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন ৩৩ জন কর্মচারী। যার বেশিরভাগই নাম করা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা। নিয়োগ পেতে তাদের ‘অনলাইনে আবেদনের খরচ’ ছাড়া কানাকড়িও খরচ হয়নি। সরকারি চাকরি যেখানে সোনার হরিণ, সেখানে তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীর এই নিয়োগ পেতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩৩৪ টাকা। আর চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারীর খরচ হয়েছে মাত্র ২২৩ টাকা। ‘সদিচ্ছা, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকলে দক্ষ এবং মেধাবী জনবল নিয়োগ করা যায়’-এমনটাই করে দেখিয়েছেন অঞ্চল-১২ এর কর্মকর্তারা। কর বিভাগে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নিয়োগকে ‘মডেল’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘টাকা আর তদবির ছাড়া কম সময়ে’ নিয়োগ পেয়ে ‘কর বিভাগ’ ও সরকারি চাকরি সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে গেছে।

কর অঞ্চল-১২, ঢাকার সূত্রমতে, কর অঞ্চল-১২ জনবল নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যাতে গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত নয় ক্যাটাগরিতে ৩৪ জন কর্মচারী নিয়োগ করার কথা বলা হয়। ঢাকা বিভাগের সকল জেলাদের বাসিন্দারা আবেদনের সুযোগ ছিলো। ০৯(নয়) ক্যাটাগরির মধ্যে কম্পিউটার অপারেটর একটি, ব্যক্তিগত সহকারী একটি, উচ্চমান সহকারী দুইটি, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পাঁচটি, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক চারটি, গাড়ী চালক পাঁচটি, নোটিশ সার্ভার পাঁচটি, অফিস সহায়ক নয়টি ও নিরাপত্তা প্রহরীর দুইটি পদে ছিলো।

সূত্র আরো জানায়, নিয়োগ প্রার্থীদের টেলিটক এর মাধ্যমে আবেদন করতে ‘৩০ দিন’ সময় দেয়া হয়। আবেদনের ক্ষেত্রে ১১ গ্রেডের ৩৩৪ টাকা, ১৩ থেকে ১৬ গ্রেডে ২২৩ টাকা ও ২০ গ্রেডে আবেদনে ১১২ টাকা খরচ নেয়া হয়। এর বাইরে কোন প্রার্থীকে অতিরিক্ত কোন টাকা দিতে হয়নি। অনলাইনে আবেদন করায় প্রার্থীদের ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার দিতে হয়নি। ডাক যোগে পাঠাতে হয়নি কাগজপত্র। নয় ক্যটাগরিতে ৩৫ জনের বিপরীতে ‘৯ হাজার ৬১৫ জন’ আবেদন করেন। এই নিয়োগ সম্পন্ন করতে কর কমিশনার মোহাঃ আবুল কালাম কমিটি গঠন করেন। যাতে অতিরিক্ত কর কমিশনার গণেশ চন্দ্র মন্ডলকে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও কর অঞ্চল-১২ এর উপকর কমিশনার (সদর দপ্তর, প্রশাসন) মো. মেহেদী মাসুদ ফয়সালকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটিকে শতভাগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থেকে ‘অত্যন্ত কম সময়ে’ নিয়োগ সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ‘সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে’ রাখতে এবং স্বচ্ছভাবে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদানে কঠোর নির্দেশনা দেন কমিশনার। নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগ কমিটি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেন। যার ফলে নিয়োগটি মডেল নিয়োগ হিসেবে কর বিভাগে আলোচিত হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি স্পর্শকতর বিষয়। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত না হলে নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এতে কর বিভাগ তথা এনবিআরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে থেকে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে এনবিআর চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ যাতে না হয়, সেজন্য প্রথমে কর অঞ্চল-১২ এর কমিশনার থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যন্ত তালিকা করা হয়। মোবাইল নাম্বারসহ সেই তালিকা একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া হয়, যাতে বাহিরের কেউ নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাতে কোন সুপারিশ, কোন তদবির, নিয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে। প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতদের মোবাইল ফোন আহ্বায়কের কাছে জমা রাখা হয়। প্রশ্ন প্রণয়নের কাজ শুরুর পূর্বেই ওয়াইফাই বা ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা হয়। প্রশ্ন প্রণয়ন করা রুমে জেমার ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। প্রশ্ন প্রণয়ন শেষে কোন কর্মকর্তা একা নয়, একসঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। প্রশ্ন প্রণয়ন রুমের বাইরে সিসি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হয় এবং পুলিশের উপস্থিতি ছিল। রুমে কারো প্রবেশের সুযোগ ছিল না। পর্যাপ্ত খাবার রুমে রাখা ছিল। লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রশ্ন প্রনয়নকারীদের মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয় এবং প্রশ্ন টাইপিং ও ফটোকপি মেশিন অপারেটর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কমিটির সাথে পরীক্ষার কেন্দ্রে ছিল। লিখিত পরীক্ষার কোডিং করা খাতা মূল্যায়নের পর ডিকোড না করেই উর্তীর্ণ প্রার্থীদের খাতাগুলো আলাদা করা হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সংখ্যা নিশ্চিত করার পর ফলাফল প্রকাশের জন্য ডিকোড করে সাথে সাথেই খাতাগুলো সিলগালা করা হয়। যা মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের সময় সিলগালা খাম খোলা হয়। সারারাত লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখে সকালে ফলাফল প্রকাশ করার পর কর্মকর্তারা বাসা গিয়েছেন। প্রতিদিনের ভাইভা নেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছ ও নিখুঁত করতে কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই চাকরি নিশ্চিত-এই ধারণা ভুল প্রমাণ করা হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার সময় প্রার্থীকে আবার লিখতে দেয়া হয়েছে। খাতার লেখার সঙ্গে হাতের লেখা মেলানো হয়েছে। প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার খাতায় যেসব প্রশ্নের উত্তর লিখেছেন সেই প্রশ্নের উত্তর মৌখিক পরীক্ষার সময় দেয়া খাতায় লিখতে হয়েছে। এমন ফিল্টারিং করায় মৌখিক পরীক্ষার সময় ১৩ জন প্রার্থীকে আটক করা। যাদের লিখিত পরীক্ষা অন্য কেউ দিয়েছেন। আবার পরীক্ষার হল থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। ১১ জনকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করা হয়েছে। আরো ০২(দুই) জনের মামলা করা হবে। অনেক সুপারিশ সত্ত্বেও তাদের ছাড়া হয়নি। মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর মেধার পরীক্ষা নেয়া হয়। জোর দেয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষায়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এই নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি থেকে স্নাতম পর্যন্ত। তবে নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা। অত্যন্ত মেধাবী ও যোগ্যরাই নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে মনে করেন নিয়োগ সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, ২৬ মে রাজধানীর ইডেন কলেজ, গর্ভনমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লেইড হিউম্যান সায়েন্স, আজিমপুর-এই দুই কেন্দ্রে একযোগে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় চার হাজার প্রার্থী ‘লিখিত পরীক্ষায়’ অংশ নেন। কমিটির সদস্যদের সহায়তায় অধিক সংখ্যক শিক্ষক সারারাত খাতা মূল্যায়ন শেষে রাতেই ফলাফল দেয়া হয়। ২৯ মে বিসিএস কর একাডেমি ও ৩০ মে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হয়। ৩১ মে ও ১ জুন তৃতীয় শ্রেণির এবং ৩ জুন চতুর্থ শ্রেণির ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রতিদিন যেই পরীক্ষা হতো, তাতে যারা উত্তীর্ণ হতো ওইদিন উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হতো। মৌখিক পরীক্ষা শেষে সব ধরণের কোটা অনুসরণ করে ৩৩ জনকে চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ কর অঞ্চলের ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ করা হয়।

অপরদিকে, নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা ও তদবির লেগেছে কিনা, এত অল্প সময়ে কিভাবে নিয়োগ সম্পন্ন হলো, কোন ধরনের আনফেয়ার কিছু হয়েছে কিনা-এসব বিষয়ে জানতে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত কয়েকজনের সঙ্গে দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে উচ্চমান সহকারী পদে সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন মো. নাসির উদ্দিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন। নাসির উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নিয়োগ এক হাজার পার্সেন্ট স্বচ্ছ হয়েছে। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। অনৈতিক কিছুই হয়নি। কেউ যোগাযোগ করেনি বা কেউ কোন অফারও করেনি। শতভাগ ফেয়ার হয়েছে। কর বিভাগে অর্থের মাধ্যমে নিয়োগ হয়-এমন ধারণা ভুল। যোগ্যতায় চাকরি হয়েছে।’

ব্যক্তিগত সহকারী পদে সুপারিশপ্রাপ্ত নিবাস বারী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নিয়োগে অনৈতিক কিছুই হয়নি। চাকরি হবে কল্পনাও করতে পারিনি। মাত্র ২২৩ টাকা দিয়ে আবেদন করেছি। যাতায়াত খরচ ছাড়া আর চার আনাও আমার খরচ হয়নি। মেধার জোরে টিকেছি। মেধার মূল্যায়ন হয়েছে এজন অথরিটিকে ধন্যবাদ জানাই। প্রক্সি হয়েছে, কেউ অনৈতিক সুবিধা দিয়ে চাকরি হয়েছে-এমন কিছুই শুনিনি। শতভাগ ফেয়ার হয়েছে।’

অফিস সহায়ক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত মিঠুন সরকার এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নিয়োগ একেবারে স্বচ্ছ ও শতভাগ ফেয়ার হয়েছে এতে কোন সন্দেহ। এখানে কোন অনৈতিক কিছু হয়নি। একজনের পরীক্ষা অন্যজন দিয়েছে এমন কিছুই শুনিনি। লিখিত পরীক্ষা আর ভাইভা দিয়েই চাকরি হয়েছে। কর অফিসে টাকা ছাড়া চাকরি হয় না এমন কিছুই দেখিনি।’

অপরদিকে, কর অঞ্চল-১২ এর কমিশনার মোহাঃ আবুল কালাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এই নিয়োগ নজিরবিহীন স্বচ্ছ হয়েছে। সবার নাম্বার গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়ার অর্থ হলো যাতে কেউ অনৈতিক সুবিধা নিতে না পারে। কিছু অসাধু নিয়োগ প্রত্যাশী অনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের জন্য আমার কর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রভাব বিস্তার করতে পারে-এমন আশঙ্কা থেকেই নজরদারির জন্য এই উদ্যোগ। আমরা বেস্ট অব দ্য বেস্ট নেয়ার চেষ্টা করেছি। নিয়োগ অত্যন্ত স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতা পূর্ণ হওয়ায় মেধাবীরাই নিয়োগ পেয়েছেন। প্রক্সি দেয়ার চেষ্টা করায় ১২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুপারিশপ্রাপ্তদের আবেদন ফি ছাড়া বাড়তি এক টাকাও লাগেনি। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ সম্পূর্ণ করেছি।’

কোন ধরনের তদবির ছিলো কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘তদবির করার কোন সুযোগই নেই। তদবির যাতে না আসতে পারে-সেজন্য দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে-এমন ম্যাসেজ পাওয়ার পর কেউ আর তদবির করার সাহস পায়নি। আসলে একটি ভালো, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ দেয়ার জন্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট। আমার পুরো টিম সেই সদিচ্ছা দেখিয়েছেন।’

নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত কর কমিশনার গণেশ চন্দ্র মন্ডল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা যে প্রত্যাশা নিয়ে নিয়োগের কাজ শুরু করেছি, প্রত্যেক স্টেপে আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি। শতভাগ সাফল্য আর পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে নিয়োগ শেষ করতে পেরেছি। নিয়োগ নিখুঁত করতে ভাইভার নাম্বারও আমরা সবাই আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়ে দিয়েছি। নিয়োগ যে এত ভালো হতে পারে, কাছ থেকে কেউ যদি দেখে থাকে তাহলে বিশ্বাস করবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রক্সির সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি। ফিল্টারিং এমনভাবে করা হয়, যতই চালাকি করেছে, অসৎ পথের আশ্রয় নিয়েছে, কারো পক্ষে আমাদের এই ফিল্টারিং সিস্টেম অতিক্রম করা আদৌ সম্ভব নয়। যারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, ভাইভার সময় তাকে আবার খাতায় লিখতে দেয়া হয়েছে। হাতের লেখা মিলিয়ে দেখা হয়েছে। হাতের লেখার সঙ্গে মিল না হলে তারা ধরা পড়েছে। লিখিত পরীক্ষায় যা এসেছে, ভাইভার সময় তা মুখে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। লিখতে দেয়া হয়েছে। প্রক্সি যাতে কোনভাবেই দিতে না পারে, সেটাই শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। এটাই এই নিয়োগের বড় সাফল্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই নিয়োগের মাধ্যমে যোগ্যতারাই এসেছেন। মেধাবী বা যোগ্যতারা যখন একটা ডিপার্টমেন্টে আসেন, সে ৩০ বছর ধরে সার্ভিস দেবেন। যেনতেন কেউ নিয়োগ পেলে তার কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সার্ভিস পাওয়া যায় না। মডেল নিয়োগ হতে গেলে আমাদের এই নিয়োগ থেকে আর ভালো আমার মনে হয় আর সম্ভব না।’

এই বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও উপকর কমিশনার মো. মেহেদী মাসুদ ফয়সাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘একটি ডিপার্টমেন্ট এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্ট্রাটেজিক পরিকল্পনার প্রথম অংশ হলো ভালো জনবল নিয়েগ করা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলা। এত অল্প সময়ে একটি ভালো নিয়োগ উপহার দিতে আমরা টানা ৬০ ঘণ্টা নির্ঘূম ছিলাম। কোন ধরণের প্রভাব, তদবির ছাড়াই একদল মেধাবীকে ডিপার্টমেন্টে নিয়োগ দিয়ে টাকা ছাড়াই কর বিভাগে যে যোগ্যতার মাপকাঠিতে চাকরি পাওয়া সম্ভব, পরীক্ষার্থীদের মনে এই আস্থা অর্জন করাতে পারায় আমরা খুশি।’