Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 6:07 pm

টানা বর্ষণে রাঙামাটি বান্দরবানে পাহাড়ধসে প্রাণহানির শঙ্কা

প্রতিনিধি, বান্দরবান: টানা বর্ষণে রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বান্দরবানের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রশাসন এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি ও মাইকিং করা হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বান্দরবানে টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

টানা বর্ষণে বান্দরবান সদরের কালাঘাটা, বালাঘাটা, ইসলামপুর, বনরুপা পাড়া, বাহাদুরনগর, এমডিএস এলাকা, হাফেজঘোনা এবং রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও লামা-সূয়ালক সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ধসে প্রাণহানির শঙ্কায় জেলায় পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. ইসলাম বেবী বলেন, টানা বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিগুলো ছেড়ে লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। মাইকিং করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছেড়ে লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হচ্ছে। তারপরও যারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাতটি উপজেলার ইউএনও এবং ৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুর্যোগ মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বান্দরবান আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মণ্ডল বলেন, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে সকালের পর থেকেই ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে, যা থাকবে আরও কদিন।

রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঝুঁকি: এদিকে টানা বর্ষণে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করা হচ্ছে। এরই মধ্যে শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সরে যেতে নিকটস্থ ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে কাউকে পাওয়া যায়নি।

প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে চার হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এদিকে গত শুক্রবার থেকে টানা বর্ষণ চলছে। গতকাল শনিবারও সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রাঙামাটি আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, এরই মধ্যে আমরা জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। শহরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে বিকাল থেকে চারটা টিম কাজ শুরু করবে। প্রয়োজনে জোর করে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে।

প্রসঙ্গত, পাহাড়ধসে ২০১৭ সালে ১২০ জন এবং ২০১৮ সালে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল রাঙামাটিতে।