সৈয়দ মহিউদ্দীন হাশেমী, সাতক্ষীরা: দুই দিনের ভারী বর্ষণে সাতক্ষীরার পৌর এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় নদীতীরবর্তী এলাকায় ভারী বর্ষণের ফলে বাড়িঘর, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।
একনাগাড়ে বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত সাতক্ষীরা জেলা শহরের নিন্মাঞ্চলও। বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি জমেছে। এছাড়া জলমগ্ন জেলার বহু অংশ। টানা বৃষ্টিতে বেতনা, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়ার পানির
বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, নিম্নচাপের কারণে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদনদীর পানি বেড়ে উপকূলীয় নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বর্ষণ শুরু হয়ে এখনও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে মাঠে-ঘাটে থইথই পানি। ভেসে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। নিরুপায় হয়ে বসতভিটা ছাড়ছেন উপকূলের অনেক বাসিন্দা।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি ক্রমে জটিল আকার ধারণ করছে। বৃষ্টিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত শ্রমজীবী মানুষদের। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চল আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আমনের মৌসুমে ধানে শীষ ধরেছে। এমন ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় জেলার কয়েক লাখ হেক্টর আবাদি আমনের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া শীতের আগাম সবজি চাষও চরম ক্ষতিতে পড়েছে।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম এখনও পানিতে। দিশাহারা এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী এখন উপকূলীয় এ অঞ্চলের মানুষদের অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার দক্ষিণের শেষ ইউনিয়ন গাবুরা ও আশাশুনির প্রতাপনগর। এগুলোকে দ্বীপ ইউনিয়নও বলা হয়। এ জনপদের মানুষ চলতি বর্ষায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশাহারা মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেই হারিয়েছেন বসতভিটা।
তিনি আরও বলেন, এখানে এখন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই, খাবার পানির সংকট চলছে। জীবিকার তাগিদে এলাকার হাজারো মানুষ এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন। উপকূলীয় বাঁধের ভাঙন যদি স্থায়ীভাবে রোধ করা যায়, তবেই এ জনপদ আগামী দিনে বসবাসের উপযোগী হবে। এলাকার কোনো রাস্তাঘাট ভালো নেই, মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মানুষের ক্ষয়ক্ষতি বন্ধে স্থায়ী সমাধান দরকার। আর সেটি করতে হলে একমাত্র উপায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ।