টানা ‘বিক্রয় চাপে’ আবার নিম্নমুখী পুঁজিবাজার

মো. আসাদুজ্জামান নূর: আগের দুই কার্যদিবসের মতো গতকাল বুধবারও বিক্রয় চাপে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ও সূচকের পতন ঘটে। গতকাল ডিএসইতে এক হাজার ১৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। এর আগে গত ২৯ জুন ডিএসইতে এক হাজার ১৪৮ কোটি আট লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এছাড়াও আগের কার্যদিবস গত মঙ্গলবারেও ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। সেই হিসেবে গতকাল বুধবার লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ১৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা কমেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে ‘বিক্রয় চাপ’ বাজারে টাকার অঙ্কে লেনদেন ও সূচকের পতন ঘটাচ্ছে। আগের দুই কার্যদিবসের মতো গতকালও বাজারে বায়ারদের চেয়ে সেলাররা বেশি সক্রিয় ছিলেন। ফলে সূচক ৫৬ পয়েন্ট হ্রাস পায়।

পুঁজিবাজারে গতকাল পাট ও সিমেন্ট খাতে ‘ক্রয় চাপ’ বেশি ছিল। অন্যদিকে টেলিযোগাযোগ ও খাদ্য খাতে ‘বিক্রয় চাপ’ বেশি ছিল। ফলে গতকাল খাদ্য খাতে শূন্য দশমিক ১৯২ শতাংশ বাজার মূলধন হ্রাস পায়।

মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার। কিন্তু গতকাল সেখানে থেকে ঘুরে ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ার কেনেন তারা। ফলে গতকাল ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ারে সর্বোচ্চ ‘ক্রয় চাপ’ লক্ষ করা গেছে।

তবে মঙ্গলবারের মতোই গতকালও ‘এন’ ক্যাটেগরির শেয়ার ছেড়ে দেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে টানা দুই দিন থেকে ‘এন’ ক্যাটেগরির শেয়ারে বিক্রয় চাপ দেখা গেছে।

আগের কার্যদিবসের চেয়ে লেনদেন কমলেও ১৭.৮১ শতাংশ অবদান রেখে শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাত। গতকাল এ খাতে লেনদেন হয় ১৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৩৩৬ কোটি টাকা। গতকাল বুধবার এ খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেতে দেখা যায়। লেনদেন হওয়া ৪১টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে দর বেড়েছে ১৩টির ও অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটির।

পরের অবস্থানে ছিল বিবিধ খাত। ১৬৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ১৪.৯৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়েও লেনদেন কিছুটা বাড়তে দেখা যায়। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার এ খাতের লেনদেন ছিল ১৪১ কোটি ৭০ লাখ। গতকাল সাতটি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস ও ছয়টির বৃদ্ধি পায়। 

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের লেনদেন ছিল ১৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ১২.৪৪ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতের লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কম ছিল। মঙ্গলবার ১৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা লেনদেনের ফলে এ খাতের অবদান ছিল ১৪.৩৮ শতাংশ। গতকাল ১৭টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পায়। এছাড়া ১২টির কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ে ও মাত্র একটির অপরিবর্তিত থাকতে দেখা যায়।

লেনদেনে চতুর্থ অবস্থানে ব্যাংক খাতেরও লেনদেন আগের কার্যদিবস মঙ্গলবারের চেয়ে কমতে দেখা যায়। এ খাতে গতকাল ১১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। ফলে লেনদেনে অবদান দাঁড়ায় ১০.৪৫ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল ১৫০ কোটি ৭০ লাখ। গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর হ্রাস পেতে দেখা গেছে। ১৯টি প্রতিষ্ঠানে শেয়ারদর হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে এ খাতের সাতটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ে ও ছয়টির অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে।

পঞ্চম অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের লেনদেন ছিল ৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। ৬.২৮ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতের লেনদেন আগের কার্যদিবসের কম ছিল। মঙ্গলবার এ খাতে ৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। গতকাল লেনদেন হওয়া ১৩টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ও কমেছে ২৮টির।

এছাড়া গতকাল লেনদেনে খাদ্য ৫.৯৫ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪.৯০ শতাংশ, জ্বালানি ৪.৩০ শতাংশ, জীবন বিমা ৩.৭৭ শতাংশ ও সিমেন্ট খাত ৩.৪৩ শতাংশ অবদান রাখে।

গতকাল ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৫৬ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে অবস্থান করে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে দুই হাজার ৫৮৫ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক সাত পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৬১ পয়েন্টে স্থির হতে দেখা যায়।

গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৭৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৮৯টির, কমেছে ২৪৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪০টির।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০