নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: দেশের প্রথম গ্লাস উৎপাদন কারখানা উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেডে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিপাকে আছেন। নানা কারণে দেড় বছর ধরে গ্লাস উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে কোম্পানিটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বছর শেষে লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এতে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ট লসে আছেন। অন্যদিকে কোম্পানির শেয়ারদর বাজারে প্রতিদিন কমছে। এতে ক্যাপিটাল লসে আছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত পুরোনো প্রযুক্তি ও জরাজীর্ণ পুরোনো যন্ত্রপাতি দ্বারা শুধু সাদা রঙের গ্লাস শিট উৎপাদন করত উসমানিয়া। এরই মধ্যে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ আছে এক নম্বর ফার্নেস। আর ডুবে যাওয়া ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকা ২ নম্বর মেশিনটি (ইউনিট) মাঝে চালু হলেও প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ কোটি ৭১ লাখ টাকাসহ সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরের ৪৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা লোকসান করে। আর লোকসানের ধারা অব্যাহত আছে। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা। আর চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭১ টাকা ১৪ পয়সা।
প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্ত্রিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে মোট বিক্রি ছিল এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রীত পণ্যের ব্যয়, বিক্রয়-বিপণন ব্যয়, প্রশাসনিক ব্যয়সহ সব ধরনের খরচ নির্বাহ করার পর নিট লোকসান হয়েছে ১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে পাঁচ টাকা ৮৪ পয়সা পয়সা। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি সাত লাখ টাকা। আর বছর শেষে এ লোকসান আরও বাড়বে। এদিকে গত অর্থবছরের শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এ নিয়ে টানা পাঁচ বছর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
নাম প্রকাশে একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার নগদ অর্থ এবং নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ ইনস্টল (স্থাপন) না করলে কোম্পানিটির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক বিনিয়োগকারী বলেন, করুণ দশা থেকে উত্তরণে কোম্পানি সম্পূর্ণ ৯ দশমিক ৮ একর জমিসহ বেসরকারি খাতে অথবা পিপিপির মাধ্যমে আধুনিক কারিগরি ক্ষমতাসম্পন্ন করে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। তা না হলে এ কোম্পানি হারিয়ে যাবে। এ কোম্পানির শেয়ার গড়ে ১০০ টাকা করে কেনা। এখন ৩৭ টাকা দর। কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। এছাড়া কনটেইনার গ্লাস প্ল্যান্ট অর্থাৎ আধুনিক একটি ইউনিটের পরিকল্পনা এখন পরিকল্পনায় রয়েছে। অথচ গ্লাসের বাজারের বেসরকারি প্রতিযোগীরা এখন আরও এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিযোগীদের তুলনায় পুরোনো প্রযুক্তিতে গ্লাস শিট উৎপাদন করত উসমানিয়া গ্লাস শিট। এতে পণ্যের মান নিম্নমানের হলেও উৎপাদনের ব্যয় বেশি। ফলে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত মূল্য কমানোর প্রতিযোগিতায় থাকার কারণে কয়েক বছর ধরে লোকসানের পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম আনিসুরজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, গত ৩০ আগস্ট থেকে আমাদের কারখানার পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আর চালু বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি। তাই চালুর বিষয়ে কোনো কিছু মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে বিদ্যামান কারখানা চালুর সম্ভাবনা আছে। এছাড়া নতুন কনটেইনার গ্লাস প্রকল্প এখনও পুরোপুরি বাতিল হয়নি। যদিও কনটেইনার গ্লাস ইউনিট করার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মার্কেট স্টাডি হয়েছে, যা আমাদের পরিচালকদের সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে কিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে। এরপর প্রকল্প ডিজাইন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, অর্থায়নের উৎস প্রভৃতি নিশ্চিত হলে, তখন কাজ শুরু হওয়ার সুযোগ আছে। আর এ ধরনের প্রকল্পে তো অনেক সময় লাগে। এ প্রকল্পের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরির পরিশোধিত মূলধন ১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার সমাপনী দর ছিল ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা। সরকারের মালিকানা ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ, উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে দুই শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার মালিকানা রয়েছে। আর গত এক বছরের সর্বোচ্চ দর ছিল ৬৭ টাকা ৮০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দর ছিল ৩৫ টাকা ৬০ পয়সা।