দেলোয়ার কবীর : যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধা-বিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন
বেকারত্ব ঘুচাতে ভিটেমাটি বিক্রি করে অনেক যুবক বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। অনেকে দেশে থেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বাড়িতে বসেই অর্থ উপার্জন সম্ভবÑএটা প্রমাণ করেছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কয়েকজন যুবক। ইংরেজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করা দেলোয়ার হোসেন তাদেরই একজন। শহরের হল রোডের বাড়িতে টার্কি, তিত মুরগি ও
সোনালি মুরগি পালন করছেন তিনি। ইনকিউবেটরের সাহায্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করছেন আকর্ষণীয় দামে। বাড়ির কাজের ফাঁকে গৃহিণীরাও টার্কি মুরগি পালন করে বেশ লাভবান হতে পারেন বলে মনে করেন দেলোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, কয়েক বছর আগে ছাত্রাবস্থায় ছোট একটি ব্রয়লার ফার্ম গড়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হন। বাবা-মা বাদ সাধলে তার আগ্রহ বেড়ে যায়। তখনই সংকল্প করেন বড় আকারের মুরগি ও গবাদিপশুর খামার গড়ে তোলার। বড় ভাই কুয়েত প্রবাসী বাদশা হোসেনের অনুপ্রেরণায় ২০১৭ সালের শুরুতে দুটি টার্কি দিয়ে ‘এবি বহুমুখী ফার্মস’ নামে খামার শুরু করেন। এখন তার খামারে ৪৬টি মুরগি আর ৩৪টি মোরগ রয়েছে। প্রতিদিন ১৬টি করে ডিম দিচ্ছে মুরগিগুলো।
দেলোয়ার হোসেন জানান, টার্কির ডিম তিনি বিক্রি না করে তা ইনকিউবেটরে ফুটিয়ে একদিনের বাচ্চা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতি মাসে মেশিনে তিন হাজারের মতো ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব বলে জানান তিনি। এতে শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুৎ বিল, ওষুধ প্রভৃতি বাদে তার নিট আয় হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এছাড়া তিত আর সোনালি মুরগি থেকেও কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা আয় করেন প্রতি মাসে।
নওগাঁর শালুকা থেকে একদিনের কয়েকটি টার্কির বাচ্চা সাড়ে ৩০০ টাকায় কিনে খামারে পালন শুরু করেন। খামারের মুরগিগুলোকে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মত লেয়ারফিড, ভুট্টা, রাইস পলিম, সয়াবিন, টক্সিনবাইন্ডার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও চর্বিমুক্ত খাবার খাওয়ানোর ফলে তা মানবদেহে ক্ষতিকর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি করেন তিনি।
দেশের বেকারত্ব ও কর্মহীনতা বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন জানান, কর্মসংস্থানের সন্ধানে ছুটছেন এমন ১০ যুবককে বিনামূল্যে ১০টি করে টার্কির বাচ্চা উপহার দেব। তাদের কাছ থেকে বাজারদরে ডিম কিনে ইনকিউবেটরে ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে তার। এতে বেকার যুুবকদের কর্মসংস্থান হবে। একই সঙ্গে টার্কির প্রচলন ও জনপ্রিয়তা বাড়বে। তিনি আরও জানান, টার্কি খামারের কাছে একটি ডেইরি ফার্ম তৈরি করতে যাচ্ছেন তিনি। কমপক্ষে ২০টি উন্নত জাতের গাভী পালন করে এলাকার দুধের চাহিদা পূরণে কাজ করার ইচ্ছা আছে তার। কোনো ক্ষতিকর ও কৃত্রিম খাবার ওইসব পশুকে খাওয়ানো হবে না বলেও তিনি জানান।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্থানীয় ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (ভিএফএ) সফিকুল ইসলাম বাবু জানান, এবি বহুমুখী ফার্মস এলাকায় মুরগির ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণে ভ‚মিকা রাখছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, দিন দিন টার্কিসহ তিত ও সোনালি মুরগির খামার গড়ে ওঠা ছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। একটি টার্কি মুরগির ওজন আট থেকে ১২ কেজি হওয়ায় একজন ক্রেতার পক্ষে অনেক সময় আস্ত মুরগি কিনে মাংস হিসেবে খাওয়া কঠিন। তবে তিন থেকে চারজন মিলে তা ভাগ করে নেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে টার্কি মুরগির মাংসের বাজার গড়ে উঠতে শুরু করেছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন হাফিজুর রহমান।
ঝিনাইদহ