টার্কি, গরু ও সবজিতে স্বাবলম্বী ইমরুল

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল শংকরপুর। এক যুগ আগেও গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ছিলেন কৃষিজীবী। ফসলাদি ভালো না হলে বছরজুড়ে অভাব লেগে থাকত। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। পুকুর-জলাশয়ে মাছ চাষ, মাছের সঙ্গে হাঁস-মুরগির খামার স্থাপনসহ সবজির চাষাবাদ করে গ্রামের অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে।

গ্রামের অধিবাসী হাজী আইয়ুব আলীর ছেলে ইমরুল কবিরও রয়েছেন এ দলে। তিনি পালন করছেন টার্কি। অল্প সময়ের মধ্যে একজন আদর্শ টার্কি খামারি হিসেবে নিজেকে অনুকরণীয় করে তুলেছেন। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ইমরুল শ্রম ও মেধার সমন্বয়ে পরিবারে ফিরিয়ে এনেছেন সচ্ছলতা। পাশাপাশি গ্রামবাসীকে শেখাচ্ছেন চাষবাস ও পশু-পাখি পালনের নানা কৌশল।

ইমরুল বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবাকে কৃষিজমিতে নানা ধরনের সবজি চাষ করতে দেখেছি। অনেকটা টানাপড়েনে ছিল আমাদের সংসার। এ দুর্দশা ঘুচাতে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেই নেমে পড়ি জীবিকার তাগিদে। বাড়ির পাশের পৈতৃক জমিতে প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষুদ্র পরিসরে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে প্রায় ৫০০ মুরগির বাচ্চা নিয়ে খামার চালু করি। এখানে প্রথম ধাপেই লাভের মুখ দেখি। এর সঙ্গে এক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে এক হাজার বাচ্চা তুলে খামারের পরিসর বড় করি। এতে লাভও হয় তুলনামূলক বেশি। আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।

২০১৭ সালের আগস্টে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’-এ পরিচালক শাইখ সিরাজের একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার হয়। প্রতিবেদনে তিনি তুলে ধরেন একজন সফল টার্কি মোরগের খামারির ভাগ্য বদলের গল্প। ওই প্রতিবেদন দেখে ইমরুল টার্কির সন্ধানে বের হন। সিলেট থেকে ১১০০ টাকায় আটটি টার্কির ডিম কেনেন। দেশীয় মুরগির তা দিয়ে সাতটি বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম হন। এর মধ্যে চারটি পুরুষ ও তিনটি নারী টার্কি ছিল।

ইমরুল বলেন, বর্তমানে মাংসের চাহিদা পূরণে গরু, মুরগি ও হাঁসের খামারের দেখা মেলে অহরহ। কিন্তু মুরগির মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য অধিক মাংসসমৃদ্ধ টার্কি পালনের বিষয়টি আমার কাছে অধিক লাভজনক বলে মনে হয়েছে। টার্কি পালনে ব্যয়ও তুলনামূলক কম। সাধারণত ৩০ সপ্তাহ পর থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে। একটি টার্কি বছরে ৮০ থেকে ১০০টি ডিম দেয়। ২৮ থেকে ৩০ দিনে এ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। তিন থেকে চার মাস বয়স হলেই বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। দেশি হাঁস-মুরগির মতো সাধারণ নিয়মে পালন করলেও তিন থেকে চার মাসে প্রতিটি টার্কি গড়ে পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজনের হয়ে থাকে। খোলা বা আবদ্ধ উভয়ভাবেই টার্কি পালন করা যায়। দেশি মুরগির মতোই টার্কিও স্বাভাবিক খাবার খায়Ñঘাস, লতাপাতা ও কচুরিপানাই এদের নিত্যদিনের খাবার।

টার্কি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে পারে। তবে টার্কি দিয়ে না ফোটানোই উত্তম। কেননা, নিজেরা ডিমে তা দিলে পুনরায় ডিম পাড়তে সময় বেশি নেয়। তাই দেশীয় মুরগি অথবা ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফোটানো ভালো। এর মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।

ইমরুল একই সঙ্গে তার বসতবাড়িতে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। খামারে বর্তমানে ১০টি ষাঁড় ও গাভি রয়েছে। গাভি থেকে দৈনিক চার লিটার দুধ সংগ্রহ করেন তিনি। পাশাপাশি গরুর গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট চালু করেছেন, যা রান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গরু বিক্রি করে বছরে দুই লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পৈতৃক কৃষিজমিতে বরবটি, লাউ, শিম, করলা, টমেটো, লালশাক, পেঁপে, কলা, আলু, বেগুন, মিষ্টি কুমড়ো প্রভৃতি চাষ করে পরিবারের সবজি চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিও করছেন। এতে মাসে পাঁচ হাজার টাকার বেশি উপার্জন হয় তার।

ইমরুল বলেন, এখন পর্যন্ত এ পথচলায় আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। বই, পত্রপত্রিকা পড়ে ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন সমাজিক মাধ্যমে প্রচারিত প্রমাণ্যচিত্র দেখে ধারণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০