হাঁস, মুরগি, গাভি পালন ও মাছ চাষের পাশাপাশি টার্কি পালনের দিকে ঝুঁকছেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার চাষিরা। সম্প্রতি টার্কি মুরগি পালন করে অতি অল্প সময়ে সফলতার মুখ দেখছেন অনেকে। প্রথমে কেউ কেউ শখের বসে পালন করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে খামার স্থাপন করে টার্কি পালন করছেন। স্বল্প সময়ে মুনাফাও করেছেন বেশিরভাগ খামারি।
উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের জামিরদিয়া গ্রামের রহমত আলী একজন টার্কির খামারি। তিনি ইতোমধ্যেই এ পাখির খামার করে লাভবান হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, একসময়ের কৃষি ও বনজ ফলনির্ভর ভালুকায় সড়ক যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় সময়ের পালবদলে এলাকাজুড়ে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। শিল্পাঞ্চল হিসেবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিশালী এলাকা হয়ে ওঠে। এখন শিল্প-কারখানাসমৃদ্ধ এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে হাঁস, মুরগি, গরুসহ বিভিন্ন খামারের প্রতি ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে। এখানে কুমিরের খামারও গড়ে উঠেছে।
পোলট্রি মুরগির চেয়ে টার্কি মুরগির
রোগ-ব্যাধি কম, মাংস খেতে সুস্বাদু ও চাষ লাভজনক হওয়ায় এ মুরগি পালন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খামারি বাসা-বাড়ির আঙিনায়, বাড়ির ছাদে, পতিত জমিতে শেড তৈরি করে ঘর তৈরি করে গড়ে তুলেছেন ছোট-বড় টার্কি মুরগির খামার।
সরেজমিন উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া গ্রামে গিয়ে রহমত আলীর তানিয়া টার্কি খামারে শত শত টার্কি মুরগি দেখা যায়। খামারের কর্ণধার মুরগি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ খামারে ছোট টার্কি মুরগি চার শতাধিক ও বড় মুরগি রয়েছে প্রায় ৫০০। এক একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এ খামারে দুটি বড় শেড, ঘাস কাটার মেশিন, ডিম ফোটানোর দুটি ইনকিউবেটর রয়েছে। এখানে ডিম ফোটানো থেকে শুরু করে বাচ্চা উৎপাদন, পালন ও কেনাবেচা হয়। তিনি জানিয়েছেন, আট মাস আগে ২০টি বড় ও ৩০টি বাচ্চা টার্কি মুরগি নিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে ৮০০ থেকে ৯০০ মুরগি রয়েছে তার খামারে। দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন পর্যন্ত ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করে উপার্জন করেছেন প্রায় তিন লাখ টাকা। খামারে বিক্রির উপযোগী মুরগি রয়েছে প্রায় চার লাখ টাকার মতো। তিনি টার্কি পালন করে সফলতার মুখ দেখছেন বলে জানান। এর আগে লেয়ার মুরগির খামার করে প্রথমদিকে লাভের মুখ দেখলেও পরবর্তী সময়ে ক্ষতির আশঙ্কায় তা বাদ দিয়ে টার্কি মুরগির খামার স্থাপন করেন।
টার্কি মুরগির খুব বেশি রোগ-বালাই নেই। তবে রাণিক্ষেত, কলেরা, বার্ডফ্লু ও ফক্সের আগাম ভ্যাকসিন দিতে হয়। খাবার হিসেবে প্রধানত পতিত জমিতে উৎপন্ন দেশি-বিদেশি ঘাস ও ঘাসজাতীয় সবজি এবং মাঝেমধ্যে বাজারের খাবার দেওয়া হয়। টার্কি মুরগির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। ছয় মাসের একটি পুরুষ টার্কির ওজন পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন হয় তিন থেকে চার কেজি। প্রতি কেজি টার্কি মুরগি বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। তিনি আরও জানান, ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ২৮ দিনেই এর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করা যায়। এছাড়া বর্তমানে দেশি মুরগির মাধ্যমেও টার্কির ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে তার কাছ থেকে টার্কি মুরগি কিনে করতে আসেন নতুন খামারি ও ক্রেতারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেলাল আহমেদ জানান, টার্কি এদেশে একটি নতুন প্রজাতির মুরগি। বেশ কিছুদিন ধরে টার্কি মুরগি পালন শুরু হয়েছে। উপজেলার জামিরদিয়া, বাটাজোড়, কাচিনা, ডাকাতিয়া, উথুরা, মোহনা, সিডস্টোরসহ বেশকিছু এলাকায় ছোট-বড় খামার তৈরি হয়েছে। ১০ থেকে ১৫টি বড় খামার ও ২০ থেকে ২৫টির মতো ছোট খামার গড়ে উঠেছে। কম খরচে অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে টার্কি মুরগি চাষে খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সব টার্কি খামারিকে প্রয়োজনীয় নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়ে থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এম. ইদ্রিছ আলী