নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি সূচকে দেশের অবস্থান প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারকে পুরো পৃথিবী অভিনন্দন জানিয়েছে। পৃথিবীর সব রাষ্ট্র নতুন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। এটাকে খাটো করার জন্য কিছু একটা বলতে হবে, সেজন্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি সূচকে নাকি দুই ধাপ নেমে গেছে বাংলাদেশ। এখন টিআইবির অভ্যন্তরে কোনো দুর্নীতি আছে কি না, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। এভাবে একপেশে রিপোর্ট দিয়ে সরকারকে খাটো করা যাবে না।
‘১৯৯৪ সালে লালবাগে সাত হত্যাকাণ্ড’ স্মরণে গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা, মিলাদ ও শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, তারা অন্যদের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যেখান থেকে ফান্ড পায়, যেভাবে প্রেসক্রিপশন দেয় সেভাবেই কাজ করে। তবে এ ধরনের সংগঠন থাকুক আমরা চাই। আমরা মনে করি সিভিল সোসাইটি সংস্থাগুলো সরকারের ভুলত্রæটি তুলে ধরতে পারে, সেজন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকা ভালো। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান যখন একচোখা হয়ে যায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির রাজনৈতিক নেতাদের মতো কথা বলে, রিজভী আহমেদের কথা আর টিআইবির বক্তব্য যখন মিলে যায়Ñতখন বোঝা যায়, ‘ডাল মে কুচ কালা হায়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আসলে বিএনপি-জামায়াত খুনি চক্র। তারা হত্যার রাজনীতিটাই করে। আজ যারা বিএনপির বড় বড় নেতা মির্জা ফখরুল সাহেব, রিজভী সাহেব সবাই বিএনপি ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলানোর আগে অন্য দল করতেন। জিয়াউর রহমান মানুষের লাশের ওপর দাঁড়িয়েই বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুতরাং সেই হত্যা-খুন-সন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি। ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে বিএনপি যেভাবে আগুনসন্ত্রাস চালিয়েছে, ২৮ অক্টোবর সমাবেশের নামে একজন পুলিশ সদস্যকে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে, এটি মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর অনুকরণে তারা পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে আইসিইউ, অ্যাম্বুলেন্সসহ হাসপাতালের ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে, যা দেশের ইতিহাসে ঘটেনি।
জালিয়াতি করতে গিয়ে বিএনপি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভুয়া উপদেষ্টাও বানিয়েছিল বলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রথমে দেখা গেল সে ইংরেজি ছাড়া কিছুই বলতে পারে না, পরে দেখা গেল যে, গড়গড়িয়ে বাংলা কয়। আপনাদের মনে আছে, কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করেছিল বিএনপি এবং ভারতের মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে একটা ভুয়া অডিও ছেড়েছিল তারা।
হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনে বিএনপি ভরাডুবি নিশ্চিত বুঝেই অংশ নেয়নি এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। এই নির্বাচনকে বৈধতা না দেয়ার জন্য, সরকারকে বৈধতা না দেয়ার জন্য বিদেশিদের কাছে চিঠি লিখেছে। কিন্তু পৃথিবীর সব রাষ্ট্র নতুন নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। বহু রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন, আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা শুনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, ভারত, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতসহ ৮০ জন ডিপ্লোম্যাট উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৯৪ সালের ৩১ জানুয়ারি শহিদ শাহ আলম, হাফিজ উদ্দীন, দেলওয়ার হোসেন, আনসারউল্লা গাজী, আনোয়ার হোসেন আনু, নজরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ইউনুসের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আমরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলাম। এটি তারা মেনে নিতে পারেনি। নির্বাচনের পরের দিন এই হতাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এর পরও অবদমিত হয়নি, বরং এই খুনি চক্রকে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সেই বিজয়ের যাত্রাপথ বেয়ে ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন।