Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:45 am

টিআইবির প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: গণপূর্তমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলছেন, ‘ভুল তথ্যের ভিত্তিতে রাজউককে হেয় করে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করেছে টিআইবি।’ গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজউকে কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে চুক্তি করে সুনির্দিষ্ট হারে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ নেওয়া হয়। এছাড়া সেবাগ্রহীতা ইমারত নকশা অনুমোদনে ক্ষেত্রবিশেষে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘সংবাদপত্রে টিআইবির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যে সংবাদ এসেছে সেখান থেকে আমি অবহিত হয়েছি, রাজউকে সেবা নিতে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ লাগে। এই বক্তব্যটি কোনোভাবে সত্য নয়, এর কোনো ভিত্তি নেই। এটা সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনবান্ধব একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হয়তো কারও দেওয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতে হেয় প্রতিপন্ন করে আলাদা একটা বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা। তাদের এই অভিযোগের কী ভিত্তি, সেই ভিত্তি কোথায় তারা সুস্পষ্টভাবে বলেননি।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘একটি অভিযোগে তারা বলেছেন, বিশেষ প্রকল্পের ক্ষেত্রে রিয়েল স্টেট ডেভেলপারকে ১৫ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এ-জাতীয় কোনো প্রকল্পের অনুমোদনই হয়নি।’

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এক বছরের বেশি সময় আগে মন্ত্রী হয়েছি। বিশেষ প্রকল্পে ১৫ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়, এ তথ্য তারা কোথায় পেলেন? এ-জাতীয় কোনো প্রকল্পই তো পাস করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা (টিআইবি) বলেছেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। আমি মন্ত্রী হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো নিয়োগই হয়নি। নিয়োগ না হলে রাজনৈতিক প্রভাবের অবকাশ এলো কোথা থেকে? নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে, আমরা এখন পর্যন্ত অ্যাডমিট কার্ডও ইস্যু করিনি। এর ভেতরে তারা বললেন, রাজনৈতিক প্রভাববিস্তারÑএটাকে তারা দুর্নীতির একটি অভিযোগ হিসেবে উত্থাপন করেছেন।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘চাবি প্রদানের ক্ষেত্রে টাকা দিতে হয় বলেছেন একবারই মাত্র উত্তরা থার্ড ফেজে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজউকে সংবাদমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে লটারি করে চাবি দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি অ্যাবসেন্ট থেকে থাকেন, তারা পরবর্তী সময়ে চাবি নিয়েছেন। তাই টাকা নিয়ে দেওয়ার কথাটি যথার্থ নয়।’

তিনি বলেন, ‘এর পরও যদি সুনির্দিষ্টভাবে তারা অভিযোগদাতার কথা আমাদের বলতেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, রাজউকে নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন। তিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করব টিআইবি এ-জাতীয় কোনো অভিযোগ আনার আগে আমাদেরও জানাবে কী অভিযোগ পেয়েছে, কাদের কাছ থেকে। টিআইবি কখনও রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো অভিযোগের বিষয়ে জানায়নি। যদি জানাত তবে নিশ্চয়ই তাদের আমরা সাহায্য করতে পারতাম।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। আমরা সেটাকে শক্ত ও কঠোরভাবে ধারণ করেছি। অনিয়ম সব দূর হয়ে গেছে, এ কথা বলা যাবে না। তবে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, এর অধিকাংশই আমরা বিনাশ করেছি। আগামীতেও করতে চাই।’

আনুষ্ঠানিকভাবে টিআইবির কাছে কোনো প্রতিবাদ জানানো হবে কি নাÑজানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, ‘টিআইবি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নয় যে তাদের আনুষ্ঠারিকভাবে… তারাই তো আমাকে কোনো অভিযোগ জানায়নি। তারা অনুমানভিত্তিক করেছে, আমরা গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। সেজন্য গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জানালাম তাদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেইÑঅসত্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’

মানহানির মামলা বা অভিযোগ করবেন কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আজকেই জেনেছি। আমরা বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

দুর্নীতি বন্ধে এর আগে দুদকের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন করা হয়েছেÑজানতে চাইলে পূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘দুদক আমাদের কিছু গাইডলাইন দিয়েছিল, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছি। সেই নির্দেশনার আলোকে চলমান কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এসেছে।’