নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানি টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ডি-লিস্টিং (তালিকাচ্যুত) হওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন জানিয়েছে। কোম্পানিটি শত চেষ্টা করেও লাভজনকভাবে পরিচালনা করতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে একটি প্রস্থান পরিকল্পনার সঙ্গে নির্দিষ্ট নিয়মে আবেদন করতে বলেছে কমিশন। সেই সঙ্গে বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জকেও জানানোর নির্দেশ
দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি।
কোম্পানিটিকে দেয়া বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে কোম্পানিকে ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বরের কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীকে নীতিগতভাবে কমিশনের সম্মতির জন্য কমিশনের কাছে একটি প্রস্থান পরিকল্পনার সঙ্গে অ্যানেক্সার-১-এ উল্লিখিত নিয়মে একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। সেই সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে এ বিষয়ে তথ্য জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোম্পানিটি ১৯৯০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর দীর্ঘদিন লোকসানে থাকে এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। এছাড়া ঠিকমতো বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা এবং কাগজের শেয়ারকে ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর না করাসহ নানা কারণে কোম্পানিটিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়।
কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন দুই কোটি ৩৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট দুই লাখ ৩৯ হাজার শেয়ারের মধ্যে ৫০ দশমিক ৮৩ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালক এবং ৪৯ দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
ডিএসইতে দেয়া কোম্পানিটির ৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে তিন টাকা ৮২ পয়সা। এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ছয় লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং ইপিএস ছিল দুই টাকা ৮৮ পয়সা। ৩০ জুন ২০১৮ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দায় দাঁড়িয়েছিল ৩৪৩ টাকা ৫৭ পয়সা।
উল্লেখ্য, এর আগে ওটিসি মার্কেটের ৪১টি কোম্পানিকে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মে ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এছাড়া ২৯টি কোম্পানির সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এর মাধ্যমে ওটিসি মার্কেট বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানা গেছে, ওটিসি মার্কেট থেকে স্থানান্তর করা ৪১ কোম্পানির মধ্যে ২৩টিকে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে। এসব কোম্পানির মধ্যে সাতটি উৎপাদনে থাকলেও ১৬টির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বাকি ১৮টি কোম্পানিকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে পাঠানো হবে।
উৎপাদনে থাকা সাত কোম্পানি হচ্ছেÑএপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, বাংলাদেশ হোটেলস, বেঙ্গল বিস্কুট, গচি হাটা অ্যাকুয়াকালচার, হিমাদ্রি, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ ও ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলস।
উৎপাদন না থাকা ১৬ কোম্পানিকে এসএমইতে স্থানান্তর করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলোÑআল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, আলফা টোব্যাকো ম্যানুফ্যাকচারিং, আমান সী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, আশরাফ টেক্সটাইল মিলস, বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মিটার, বাংলাদেশ লিফ টোব্যাকো, বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস, বায়োনিক সী ফুড, ঢাকা ফিশারিজ, এক্সেলসিওর সুজ, লেক্সকো, মেঘনা শ্রিম্প কালচার, রাসপিট ডাটা ম্যানেজমেন্ট, রাঙ্গামাটি ফুড প্রডাক্টস, থেরাপিউটিকস বাংলাদেশ ও জাগো করপোরেশন।
অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে স্থানান্তর করা ১৮ কোম্পানি হচ্ছেÑবাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ, ড্যান্ডি ডাইং, ডায়নামিক টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেটালেক্স করপোরেশন, মিতা টেক্সটাইলস, মডার্ন সিমেন্ট, মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজ, মোনা ফুড প্রোডাক্টস, পারফিউমস কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রেট্রো সিনথেটিকস প্রোডাক্টস, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল, কাশেম সিল্ক মিলস, কাশেম টেক্সটাইলস মিলস, রাসপিট ইন্ডাস্ট্রিজ বিডি, রোজ হ্যাভেন বলপেন, সালেহ কার্পেট মিলস, শেরপুর টেক্সটাইল মিলস ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।
যে ২৯ কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ ফেরত দেয়া হবে সেগুলো হলোÑআরবি টেক্সটাইল, আজাদি প্রিন্টার্স, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ ডায়িং অ্যান্ড ফিনিশিং, বাংলাদেশ লাগেজ, বাংলাদেশ জিপার ইন্ডাস্ট্রিজ, চিক টেক্সটাইল, ঈগল স্টার টেক্সটাইল মিলস, জার্মান বাংলা জেভি ফুড, গালফ ফুডস, হিল প্লানটেশন, যশোর সিমেন্ট, এম হোসাইন গার্মেন্টস ওয়াশিং, ম্যাক এন্টারপ্রাইজ, ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ, ফিনিক্স লেদার, দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স, টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস, পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার, বাংলাদেশ প্লানটেশন, খাজা মোজাউক টাইলস অ্যান্ড স্টোন, ন্যাশনাল অক্সিজেন, প্যারাগন লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার, জেম নিটওয়্যার ফেব্রিকস জিএমজি ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশন, জেএইচ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা ভেজিটেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও রূপন অয়েল অ্যান্ড ফিডস লিমিটেড।