Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:24 am

টিউশন ফি ছাড়া অন্য খাতে টাকা নিতে পারবে না স্কুল-কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনার শুরুতে ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি বাড়ানো হয়েছে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরই মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে অটোপাস দেওয়া হয়েছে। করোনায় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন খাত বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। এবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিল শিক্ষাবোর্ড। মহামারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি নিতে পারবে।

এর বাইরে টিফিন, পুনর্ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ এবং অ্যাসাইনমেন্ট-সংক্রান্ত কোনো ফি নেওয়া যাবে না বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

কভিড-১৯-এর কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিভাবকদের মতদ্বৈধতা দেখা যাচ্ছে।

অভিভাবকদের অনেকে বলছেন, স্কুল এখন বন্ধ, তাছাড়া মহামারির এই সময়ে তারাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন; ফলে তাদের পক্ষে টিউশন ফি দেওয়া সম্ভব নয়।

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে; প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও স্কুল রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রতি মাসে তাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেই হয়।

মাউশি বলছে, ‘এ অবস্থায় আমাদের যেমন অভিভাবকদের অসুবিধার কথা ভাবতে হবে, অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে না যায়, কিংবা বেতন না পেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন যেন চরম সংকটে পতিত না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি গ্রহণ করতে পারবে।

‘কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনর্ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না, বা করা হলে তা ফেরত দেবে, অথবা তা টিউশন ফি’র সঙ্গে সমন্বয় করবে। এছাড়া অন্য কোনো ফি যদি কিছু থাকে, তা একইভাবে ফেরত দেবে, বা টিউশন ফি’র সঙ্গে সমন্বয় করবে।’

মহামারির মধ্যে যেসব অভিভাবকের আয় কমে গেছে বা যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের সন্তানদের টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ বিবেচনার’ আহ্বান জানিয়েছে মাউশি।

‘যদি কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে পতিত হন, তাহলে তার সন্তানের টিউশন ফি’র বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবেন। কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন কোনো কারণে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যতœশীল হতে হবে।’

মাউশি বলছে, ২০২১ সালের শুরুতে যদি কভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন, পুনর্ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন ফি’র নামে অর্থ নিতে পারবে না। অর্থাৎ যে টাকা নির্দিষ্ট খাতে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করা যাবে না, সেই টাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেবে না।

তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের মতো সব ধরনের ‘যৌক্তিক’ ফি নেওয়া যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

মাউশি বলেছে, মহামারির এই সময়ে সংসদ টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাসের পাশাপাশি বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করলেও কিছু প্রতিষ্ঠান তা ‘ভালোভাবে’ করতে পারেনি।

‘একইভাবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এসব অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পেরেছে, কিছু শিক্ষার্থী পারেনি। সার্বিক বিবেচনায় আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে উদ্ভূত এই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।’

কভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এবার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এবং মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা নেবে না সরকার।

আর অষ্টম শ্রেণির সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে।