২০১৬ সালে অ্যাপভিত্তিক ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটক যাত্রা শুরু করে। ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয় টিকটক। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এখন স্মার্টফোনের পাশাপাশি টিকটকও এখন জায়গা করে নিয়েছে। টিকটকে সংক্ষিপ্ত ভিডিওর মাধ্যমে নাচ, গান, বক্তব্যসহ নানা বিষয় প্রচার করা যায়। ফলে নিজ নিজ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তারকা ব্যক্তিরা টিকটকে যুক্ত হওয়া ছাড়াও শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষজন টিকটকের জন্য ভিডিও তৈরি করছে। প্রযুক্তির যে কোনো সৃষ্টিকে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করা গেলেও নেতিবাচক কাজেই যেমন বেশি ব্যবহার হয়, টিকটকের বেলায়ও তা-ই হয়েছে। অশ্লীল, অসামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের পরিপন্থি ভিডিওতে সয়লাব এখন টিকটক।
টিকটকে ভিডিও আপলোড করলে সবাই দেখবে, বাহবা দেবে এবং আয়-রোজগারও করা যাবে। মূলত এ ভাবনা থেকেই সব শ্রেণির মানুষ টিকটকে মত্ত হয়েছে। টিকটকে বহু ইতিবাচক কনটেন্ট দেখা গেলেও অশ্লীল ও রুচিহীন কনটেন্টের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যারা টিকটক ভিডিও করছে তাদের অনেকেই রাস্তাঘাটে, মসজিদ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ভিডিও ধারণ করছেন। এই সময়ে তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কাণ্ডকারখানায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবমনানা হচ্ছে এবং মানুষজন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো মসজিদের সামনে, এমনকি মসজিদে গিয়েও টিকটক করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রাম-শহরের ব্যস্ত রাস্তার মাঝে শুয়ে-বসে টিকটক করার ফলে গাড়ি চলাচলে বিঘœ ঘটছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগে সিএনজি থ্রি হুইলারে গ্রামের বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার পথে খেয়াল করলাম দুটি ছেলে রাস্তায় শুয়ে আছে এবং ২টি ছেলে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবলাম, কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে কিংবা ছেলেরা মারামারি করছে কি না, কিন্তু একি! কাছে গিয়ে দেখি দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো শুয়ে থাকা ছেলেগুলোর ভিডিও ধারণ করছে। এই ঘটনা দেশব্যাপী ঘটছে এখন। টিকটকের নেশায় তরুণ-তরুণীরা যেন উম্মাদ হয়ে গেছে।
প্রযুক্তির যে কোনো উদ্ভাবনেরই ইতিবাচক দিক আছে। যতটুকু সম্ভব ভালো কাজে ব্যবহার করা হলে এবং ওই কাজ করতে গিয়ে নিজ কিংবা অন্যের ক্ষতি কিংবা সামাজিক অনাচার না হলে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেয়া যায়, কিন্তু টিকটক করতে গিয়ে বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অশ্লীল ও অসামাজিক ভিডিও করা কিংবা ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা রাস্তাঘাটে উš§াদের মতো কর্মকাণ্ড করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এছাড়া অশ্লীল ও অসামাজিক কনটেন্টের মাধ্যমে পরিবারের ছোট সদস্যরা প্রভাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় টিকটকের বাস্তবতা মাথায় রেখে ভালো-মন্দ কনটেন্টের তফাত নির্ণয় করে মন্দ কনটেন্ট সরিয়ে নেয়া এবং টিকটকরা যাতে মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ব্যস্ত রাস্তাঘাট কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভিডিও তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে অবশ্যই দ্রæততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। টিকটক ভিডিও করতে গিয়ে বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেয়া টিকটকারদের রুখে দিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
জুবায়ের আহমেদ
শিক্ষার্থী, বিজেম, ঢাকা