নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ঝিগাতলায় টিসিবির ট্রাকসেলে শুধু মসুর ডাল ও ছোলা বিক্রি হচ্ছে। সকাল ১০টায় বিক্রি শুরু করে ওই ট্রাকসেলে তেল ও চিনি মাত্র দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়েছে। তবে ডাল ও ছোলা এখনও অনেকটা অবিক্রীত রয়েছে বলে গতকাল দুপুর আড়াইটায় জানান বিক্রেতা কালাম।
শুধু ঝিগাতলা নয়; সরেজমিন ওই সময়ের পর থেকে রাজধানীর সচিবালয়ের গেটে, নিউমার্কেটের পাশে বটতলায়, সায়েন্সল্যাবের মোড়ে, খামারবাড়ির সামনে কোথাও চিনি ও তেলের দেখা মেলেনি। ওইসব কেন্দ্রে সকালেই বিক্রি শুরুর পরপরই এ দুটি পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। প্রচুর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সামান্য বরাদ্দের কারণেই তেল চিনি না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে অধিকাংশ ভোক্তাকে। ছোলা ও ডাল কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের।
টিসিবির ডিলাররা বলছে, বাজারে প্রতিকেজি চিনির খুচরা মূল্য ৭০ টাকা এবং বোতলজাত তেলের দাম প্রায় ১০০ টাকা। সেখানে টিসিবি কেজিপ্রতি ১৫ টাকা কমে এ দুটি পণ্য বিক্রি করছে। এতে দুই পণ্যের প্রতিই ঝোঁক ক্রেতাদের।
অপরদিকে তারা বলছে, যে মানের বিদেশি মসুর ডাল ও ছোলা দেওয়া হচ্ছে, সে সবের দাম খুচরা বাজারদরের সমান। ক্ষেত্র বিশেষে বেশিই। এতে ক্রেতারা এসব কিনছেন না। গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে দ্বিতীয় দিনের মতো চলে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশÑটিসিবির নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম। অনেক স্থানে সকালে বিক্রি শুরুর পরে লাইনে দাঁড়িয়ে নিত্যপণ্য কিনছেন ভোক্তারা। তবে সকালে বৃষ্টির কারণে অনেক স্থানে বিক্রি কার্যক্রম শুরু হতে দেরি হয়েছে। খামারবাড়ির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের বিক্রেতা রেজা বলেন, সকাল ৯টায় পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বরাদ্দের চিনি শেষ হয়েছে। এরপর সয়াবিন তেলও বিক্রি শেষ। এতে দুপুরের পর থেকে শুধু ছোলা ও মসুর ডাল বিক্রি করছি। চিনি-তেল থাকলে একত্রে এসব বিক্রি করতে এত সময় লাগতো না।
ডিলারদের অভিযোগ, চাহিদার চেয়ে পণ্য বরাদ্দ খুবই সীমিত। বিশেষ করে চিনি ও তেলের মতো অত্যাবশকীয় পণ্য ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় খুবই কম। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতাদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
প্রসঙ্গত, এবার প্রতিটি ট্রাকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি চিনি, ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি সয়াবিন, ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি মসুর ডাল, ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ছোলা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আর রমজানের দু-একদিন আগে থেকে ২০ থেকে ৩০ কেজি খেজুর বিক্রির জন্য দেওয়া হবে।
লিয়াকত শিকদার নামের এক ক্রেতা দুপুরে অভিযোগ করে বলেন, সকালে দীর্ঘ লাইন দেখে সময়ের অভাবে পণ্য কিনতে পারিনি। এখন দেখি সবই শেষ। এত অল্প পণ্য বিক্রির কি দরকার। যেটা প্রয়োজন সেটার বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। খুব সামান্য লোক সরকারের সুবিধার সুফল পাচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা চাহিদার তুলনায় পণ্য বিক্রি করতে পারি নগণ্য। তবে প্রতিবছরই পণ্যের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে। শুধু খেজুরের জোগান ছাড়া সব জিনিসের বরাদ্দ এ বছর বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষ চেষ্টায় রয়েছে।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে সোমবার (১৫ মে) থেকে সারা দেশে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে ১৮৫টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাক, দুই হাজার ৮১১ জন পরিবেশক এবং ১০টি খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যার মধ্যে ঢাকায় ৩০টি, চট্টগ্রামে ১০টি, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঁচটি এবং জেলা সদরে দুটি করে ট্রাক থাকার কথা।
এসব স্থান থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, তিন কেজি মসুর ডাল, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ও পাঁচ কেজি ছোলা কিনতে পারছেন। টিসিবি চিনি কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা, মাঝারি দানার মসুর ডাল ৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা লিটার ও ৭০ টাকা কেজি দরে ছোলা বিক্রি করছে।
Add Comment