টুইটারের বিজ্ঞাপনী আয় কমবে ২৮ শতাংশ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: তথ্য বিশ্লেষণকারী সংস্থা ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্স তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, টুইটারের মালিক ইলন মাস্কের কারণে ২০২৩ সালে প্লাটফর্মটির বিজ্ঞাপনী আয় ২৮ শতাংশ কমবে। খবর: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্সের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এর আগে তাদের হিসাব ছিল, ২০২৩ সালে বিজ্ঞাপন থেকে টুইটার আয় করবে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন (৪৭৪ কোটি) ডলার। সেই পূর্বাভাস তারা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে বলছে, চলতি বছর বিজ্ঞাপন থেকে টুইটারের আয় হতে পারে ২ দশমিক ৯৮ (২৯৮ কোটি) ডলার।

ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তথ্য বিশ্লেষক জেসমিন এঙ্গবার্গ বলেন, প্রধান সমস্যা হচ্ছে, বিজ্ঞাপনদাতারা ইলন মাস্ককে বিশ্বাস করেন না। এতে কোম্পানির ব্যবসা মার খাচ্ছে। জেসমিন আরও যোগ করেন, টুইটারকে কোম্পানির প্রোফাইল থেকে মাস্কের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির ছায়া সরিয়ে নিতে হবে। এতে বিজ্ঞাপনদাতারা আবার আস্থা ফিরে পেতে পারেন। তখন কোম্পানির আয় বাড়বে।

২০২২ সালে টেসলা প্রধানের টুইটারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কোম্পানিতে রীতিমতো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দায়িত্ব নেয়ার পরই মাস্ক টুইটারের কনটেন্ট সম্পাদনার লাগাম আলগা করে দেন এবং সাত হাজার কর্মীর মধ্যে অর্ধেক ছাঁটাই করেন। তখন থেকেই বিজ্ঞাপনদাতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাথম্যাটিকস জানিয়েছে, গত বছরের ২৭ অক্টোবর মাস্ক দায়িত্ব নেয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে টুইটারের শীর্ষ ৩০ বিজ্ঞাপনদাতার মধ্যে ১৪টি সংস্থা বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়।

সেই পরিস্থিতিতে মাস্ক ক্ষতি পোষাতে বিভিন্ন সেবায় মাশুল আরোপ করেন। এর মধ্যে রয়েছে গ্রাহকদের জন্য মাসে ৮ ডলারের (৭ দশমিক ৯৯ ডলার) বিনিময়ে টুইটারের ‘ব্লু টিক’ সেবা চালু করা। কিন্তু ইনসাইডার মনে করে, তাতেও কাজ হবে না। বিজ্ঞাপন থেকে যে রাজস্ব হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তার ক্ষতি মাশুলযুক্ত সেবা দিয়ে পোষানো যাবে না।

মাস্কের কারণে টুইটারে সময় ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। ইনসাইডারের পূর্বাভাস, টিকটক ব্যবহারকারীরা যেখানে দিনে গড়ে এক ঘণ্টা এ প্ল্যাটফর্মে ব্যয় করেন, সেখানে টুইটার ব্যবহারকারীদের গড় সময় দিনে ২ মিনিট কমে ৩৪ মিনিটে নেমে আসতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় কনটেন্ট হচ্ছে ভিডিও। এ ক্ষেত্রে টিকটক সবার চেয়ে এগিয়ে। ভিডিও প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টিকটকের সঙ্গে পেরে উঠছে না টুইটার। সেই সঙ্গে মাস্ক আসার পর টুইটারে ঘৃণা ভাষ্য প্রচার বেড়েছে।

জেসমিন এঙ্গবার্গ আরও বলেন, টুইটার এখনও সংবাদ শেয়ারের ওপর নির্ভরশীল। তার পিছিয়ে পড়ার এটাও একটি কারণ। এছাড়া মাস্কের বিষয়ে শুরুতে যত আগ্রহ মানুষের মধ্যে ছিল, এখন আর তা নেই। এ কারণে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে টুইটারে সময় ব্যয় করা কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবহারকারীরা।

নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার পর মাস্ক বলেছিলেন, আমি কেন টুইটার কিনলাম, তা ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে জানাতে চাই। মানবতার ভবিষ্যতের খাতিরে সব পক্ষের স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য ডিজিটাল মঞ্চ থাকা উচিত। যেখানে সুস্থ পরিবেশে কোনো ধরনের জোরজবরদস্তি ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ের মতামতের বিতর্ক হতে পারে।

টুইটারের সর্বেসর্বা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কঠোর সিদ্ধান্ত নেন মাস্ক। শুরুতে ছাঁটাই করেন টুইটারের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী পরাগ আগরওয়াল, আইন কর্মকর্তা বিজয়া গাড্ডে, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা নেড সিগাল ও জেনারেল কাউন্সেল শিন এজেটকে। এরপর শুরু হয় গণছাঁটাই। অনেক কর্মী ছাঁটাই হওয়ার আগে নিজেরা চাকরি ছেড়ে দেন।

এতে টুইটারের ভাবমূর্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরিণামে তার বিজ্ঞাপন আয় কমে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত চলতি সপ্তাহে টুইটারের সাবেক তিন প্রধান কর্মকর্তা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন।

আগামী ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে মার্কেটিং সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বক্তব্য দেবেন মাস্ক। তখন টুইটারের বিজ্ঞাপন নিয়ে কথা বলবেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০