আমিনা বেগম: সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ সর্বদা উন্নয়ন অভিমুখী। নিকট অতীতে মানুষ প্রায় সব উন্নয়ন কৌশল ও কর্মসূচিগুলোয় শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথাই চিন্তা করত। বিশ্বায়নের এই যুগে উন্নয়নের সংজ্ঞা শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, সামাজিক ও পরিবেশগত দিকও সমানভাবে বিবেচ্য। আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশকে অপ্রাসঙ্গিক রেখে একটি সুন্দর পৃথিবীর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। আর এই ভাবনাকে সামনে রেখেই টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়ন ধারণার বিকাশ ঘটে, যা বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণের একটি যুগোপযোগী প্রক্রিয়া।
টেকসই উন্নয়নের ধারণাটি উন্নয়নের পুরোনো ধারণার একটি বিবর্তন। টেকসই উন্নয়ন বর্তমান প্রজšে§র চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজšে§র নিজস্ব চাহিদা মেটানোর ক্ষমতাকে বজায় রাখে। বর্তমানে টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়ন বলতে সামাজিক সম্পৃক্তকরণ এবং পরিবেশসম্মত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বোঝায়। অর্থাৎ এটি স্থায়িত্বের তিনটি মৌলিক অক্ষ অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক অক্ষের সমন্বয় সাধন করে। পরিবেশগত সীমার মধ্য থেকে প্রবৃদ্ধি করাটা টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান নীতি। তবে টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু শুধু পরিবেশকেন্দ্রিক নয়, বরং এর কার্যক্ষেত্র আরও ব্যাপক। এটি একটি শক্তিশালী, সুস্থ এবং ন্যায্য সমাজ নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ করে। বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্প্রদায়ের সব মানুষের বৈচিত্র্যময় চাহিদা মেটানো, ব্যক্তিগত সুস্থতা, সামাজিক সংহতি, এবং অন্তর্ভুক্তি প্রচার করা এবং সমান সুযোগ তৈরি করা টেকসই উন্নয়নের মূল লক্ষ্য। টেকসই উন্নয়ন মূলত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে গৃহীত একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা। টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জন করতে স্থিতিশীল পরিবেশ, স্থিতিশীল মানব উন্নয়ন, স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয় ও টেকসই প্রযুক্তির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া খুব জরুরি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্বে উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development ‡oals) সংক্ষেপে ‘এসডিজি’ গ্রহণ করেছে। এটিকে বলা হচ্ছে ‘২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য একটি আরও ভালো এবং আরও টেকসই ভবিষ্যতের অর্জনের একটি নীলনকশা’। ১৫ বছর মেয়াদি ১৭টি প্রধান লক্ষ্য এবং তার সংশ্লিষ্ট অন্তর্র্বর্তী আরও ১৬৯টি টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ ১৯৩টি দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ হতে ২০০০ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি হাতে নেয়া হয়। ২০১৫ সালে শেষ হওয়া এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে, এমডিজি অর্জনের রোল মডেল। বাংলাদেশ এমডিজির যেসব খাতে সফল হয়েছে সেগুলো হলোÑদারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং লিঙ্গভিত্তিক সমতা। এই সফলতা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন এসডিজির সফল বাস্তবায়ন।
এমডিজি থেকে এসডিজির পরিসর অনেক বড়। ২০১৬ থেকে ২০৩০ মেয়াদে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা হলোÑএক. দারিদ্র্য বিমোচন; দুই. খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার; তিন. সবার জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ; চার. সবার জন্য শিক্ষা; পাঁচ. লিঙ্গ সমতা অর্জন ও নারী ক্ষমতায়ন; ছয়. নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা; সাত. সহজলভ্য জ্বালানি; আট. সবার জন্য কর্মসংস্থান ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন; নয়. অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় অসমতা কমিয়ে আনা; দশ. টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা; এগারো. পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরন নিশ্চিত; বারো. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা গ্রহণ; তেরো. সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার; চৌদ্দ. বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও জীববৈচিত্র্য হ্রাস প্রতিরোধ; পনেরো. ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং ষোলো. টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী বৈশ্বিক অংশীদারত্ব। এসডিজি অনুযায়ী, গৃহীত লক্ষ্যগুলো সর্বজনীন। ধনী-গরিব সব দেশের জন্যই এসব প্রযোজ্য এবং প্রয়োগ করা সম্ভব। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্থায়নের বছরে ব্যয় হবে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলার; যা বৈশ্বিকভাবে ব্যবহƒত বার্ষিক সাহায্য অনুদানের চেয়েও ৩০ গুণ বেশি।
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। ১৫ জুন, ২০২১-এ প্রকাশিত জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বের যে তিনটি দেশ সবচেয়ে এগিয়ে আছে, এর মধ্যে অবস্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি দুটি দেশ হলো আফগানিস্তান ও আইভরি কোস্ট। এসডিজির ক্ষেত্রে অগ্রগতির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ মহামারির কারণে নির্ধারিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর কারণ হলো কভিড মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কভিড মোকাবিলায় কঠিন সময় পার করেছে। এর মধ্যেও বাংলাদেশ অনেক সামাজিক সূচকেই ইতিবাচক ধারা বজায় রেখেছে। এসডিজির ২০২১ সূচকে বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২০ সালে এ স্কোর ছিল ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে যখন এসডিজি গৃহীত হয়, তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৯ দশমিক ০১ শতাংশ। ২০২১ সালের এসডিজি সূচকে বিশ্বের ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম।
সামাজিক বিভিন্ন অগ্রগতির সূচকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভূমিকা, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করছে সামাজিক পরিবর্তন, বিশেষ করে সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন। ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখে চলেছে। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নারী শিক্ষার প্রসার যেমন বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি প্রদানে ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে দেশে নারী শিক্ষার হার ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রতি বছর তরুণ-তরুণীদের বিশাল একটি অংশ বেকার থেকে যাচ্ছে। তাদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে তরুণ-তরুণীদের কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতেও উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। কৃষি খাতে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন। দেশের ৩০টি কারখানা টেকসই পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের কারণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। জ্বালানির টেকসই ব্যবহারে আমাদের শিল্প-কারখানাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে পরিবেশ উন্নত করার জন্য ব্যাপক বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজ প্রকৃতি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। টেকসই নগর ও জনপদকে কেন্দ্র করে বড় শহরগুলোয়, বিশেষত ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য পরিবহন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, পয়োনিষ্কাশন, ভূ-উপরিস্থিত পানি সরবরাহ প্রভৃতি নানা খাতে অনেক বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার যেখানে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, সেখানে ২০১৮ সালে দারিদ্র্যের হার আরও কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। নতুন পুরোনো মিলিয়ে এখন মোট জনগোষ্ঠীর ৪৩ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য চ্যালেঞ্জ স্বরূপ।
এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ১২ নম্বরে পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরন নিশ্চিত করা আর ১৩ নম্বরে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পূরণ করে ফেলেছে। সূচকের এ দুটি অবস্থানে তাই বাংলাদেশের রং সবুজ। এসডিজির ৪ নম্বরে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লক্ষ্য পূরণের পথেই রয়েছে। তাই একে সূচকের হলুদ তালিকায় রাখা হয়েছে। এর অর্থ হলো এসব ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আর এসডিজি-১, এসডিজি-২, এসডিজি-৫, এসডিজি-৭, এসডিজি-৮ এবং এসডিজি-১০-এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে কমলা তালিকায়। অর্থাৎ এই ছয় লক্ষ্য অর্জনের পথে বাংলাদেশের সামনে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া এসডিজি-৩, এসডিজি-৬, এসডিজি-৯, এসডিজি-১১, এসডিজি-১৪, এসডিজি-১৫, এসডিজি-১৬ এবং এসডিজি-১৭-এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে লাল তালিকায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এই আটটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে বাংলাদেশকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এই ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে কেবল এসডিজি-১৫তে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতির তথ্য দেয়া হয়েছে এবারের সূচকে।
পরিবর্তনশীল বিশ্বের সমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হবে। পৃথিবীর সব দেশ এ লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এসডিজির লক্ষ্যগুলো অর্জনে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সম্পদের অসম বণ্টন, বৈষম্য ও দারিদ্র্য। যদিও বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে লক্ষণীয় দিক হলো আয় ও ভোগ বৈষম্য। গত কয়েক বছরে এই বৈষম্য কিছুটা কমেছে, তথাপি বিদ্যমান বৈষম্য প্রকট। আমাদের সম্পদের বৈষম্য ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ধনী-গরিবের ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের ফলে দারিদ্র্য আরও প্রকট হচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হলো পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এক শ্রেণির মানুষ অবৈধভাবে নদী দখলের ফলে জলজ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে এবং নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ নাগরিক জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অভাব উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার অভাব সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে সামষ্টিক পর্যায় সবক্ষেত্রে বৈষম্য, সমন্বয়হীনতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতাই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ।
টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি কোম্পানি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সমাজ সংস্থাসহ সবাইকেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থা মূলত পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে চালিয়ে যেতে সহায়তা করে, প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশের গুণগত মান বজায় রেখে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি করার চেষ্টা করে, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদের হ্রাস বা ধ্বংস না করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু টেকসই বিশ্ব নয় বরং সমৃদ্ধি ও সমতার দিক থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এসডিজি বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি নতুন এজেন্ডা।
শিক্ষার্থী
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
aminakeya48@gmail.com