টেকসই উন্নয়নে ঋণখেলাপিদের প্রতি কঠোর হতে হবে

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু খেলাপি ঋণের কারণে দেশের ব্যাংক খাত নাজুক অবস্থানে রয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে এবং সরকারকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে যারা বড় ধরনের ঋণখেলাপি তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে বাধা ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা উচিত। এ বিষয়ে সরকার যদি কঠোর হয় তাহলে ঋণখেলাপিরা বাধ্য হবে ঋণ পরিশোধ করতে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনবিইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও সিইও এজেডএম সালেহ।
আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, নির্বাচনের পর অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে। কারণ ১ জানুয়ারিতে পুঁজিবাজার ইতিবাচক অবস্থানে ছিল। কিন্তু এখনও পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও ম্যানুপুলেশনের সুযোগ রয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে বাজারে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও কারসাজি বন্ধ করতে হবে। সামনে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অবস্থানে যাবে বলে আমার মনে হয়। পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় এখনও পরিবর্তন করার বাকি রয়েছে। অর্থাৎ ওই বিষয়গুলো পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে হবে।
এজেডএম সালেহ বলেন, পুঁজিবাজার হচ্ছে একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। আর এ চালিকা শক্তির মূল উৎস হচ্ছে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, পুঁজিবাজার সম্পর্কে ধারণা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর। এখন কথা হচ্ছে পুঁজিবাজারের এ অবস্থা কেন। আসলে পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা হচ্ছে দুটি। প্রথম সমস্যা হচ্ছে নীতি, নৈতিকতা, আদর্শের অভাব। তাই সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে নীতি, নৈতিকতা এবং আদর্শ থাকাটা অপরিহার্য। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে পুঁজিবাজারের ওপর আস্থার সংকট। পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা ফেরাতে বাজারসংশ্লিষ্টদের সঠিকভাবে কাজ করতে হবে।
নির্বাচনের পূর্বে যে কোনো দেশ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করে। কারা সরকার গঠন করবে, কি ধরনের পরিবর্তন আসবে এবং মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট কি ধরনের পরিবর্তন আনবে ইত্যাদি নিয়ে। নির্বাচনের পূর্বে অনেক বিনিয়োগকারী নিরাপদ অবস্থানে ছিল। নির্বাচনে কি হয় না হয় তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল তারা। কিন্তু নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারের ইতিবাচক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে এবং বিনিয়োগকারীরাও আস্থা ফিরে পাচ্ছে। যদি এ ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে তাহলে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট, মার্জিন ঋণের নীতিগত সমস্যাসহ নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, সরকারের প্রথম কাজ হবে সুশাসন নিশ্চিত করা। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক খাত, পুঁজিবাজারে সুশাসন অত্যন্ত জরুরি। যদি ব্যাংক, আর্থিক খাতে সুশাসন বজায় থাকে তাহলে বাজার ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাবে। কারণ ব্যাংক ও আর্থিক খাত পুঁজিবাজারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাত নাজুক অবস্থানে রয়েছে। তাই টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে এবং সরকারকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে যারা বড় ধরনের ঋণখেলাপি তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, প্রোপার্টি কেনার ক্ষেত্রে বাধা ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা উচিত, যা বিদেশে করা হয়। এ বিষয়গুলোর প্রতি সরকার যদি কঠোর হয় তাহলে তারা বাধ্য হবে ঋণ পরিশোধ করতে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০