টেকসই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে দরকার কৃষিসম্পদের সদ্ব্যবহার

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা বা এলডিসি থেকে টেকসই উপায়ে উত্তরণ ঘটানোর জন্য স্থানীয় কৃষিসম্পদের সদ্ব্যবহার ও শিল্পের বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। একইসঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে তারা দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন ও কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী শহরে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন। ‘লোকাল লেভেল স্টেকহোল্ডার্স কনসালটেশন অন ইনক্লুসিভ, স্মুথ অ্যান্ড সাসটেইনেবল এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প এ কর্মশালা আয়োজন করে।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহীর ডিসি আব্দুল জলিল।

বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সব মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়। সিডিপি ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতিকালসহ বাংলাদেশের উত্তরণ সুপারিশ করেছে। এরপর তা ইকোসক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তা অনুমোদন করেছে। ফলে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে

বেরিয়ে আসবে।

উত্তরণ প্রক্রিয়া মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-সংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। উত্তরণ-সংক্রান্ত বিভিন্ন মৌলিক বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য জাতীয় কমিটির দিকনির্দেশনায় সাতটি সাবকমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, প্রস্তুতিকালে উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক অংশীদারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময়ক্রমে একটি স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস) প্রণয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবের নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সহ-নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাবকমিটি কাজ করছে। উত্তরণের সম্ভাব্য প্রভাবসমূহ চিহ্নিতকরণ, প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি, উত্তরণ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং ওই অর্জনকে দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্যে ইআরডির অধীনে সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রজেক্ট (এসএসজিপি) শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রক্রিয়া এবং তার ফলে সৃষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ের অংশীদারদের অবহিত করা এবং উত্তরণ প্রক্রিয়া মসৃণ ও টেকসইকরণের প্রক্রিয়ায় তাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এসএসজিপি প্রকল্পের সহায়তায় ওই কর্মশালা আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় শরিফা খান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে আমাদের যে প্রতিবন্ধকতাগুলো সৃষ্টি হতে পারে, সেগুলোকে আমাদের ইতিবাচক সম্ভাবনায় পরিণত করতে হবে।

জিএসএম জাফরউল্লাহ উল্লেখ করেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকে টেকসই করতে হলে বাংলাদেশকে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকালের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। একইসঙ্গে তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

আব্দুল জলিল তার বক্তৃতায় আশা প্রকাশ করেন, স্থানীয় পর্যায়ে আয়োজিত এ ধরনের কর্মশালা থেকে মতামত ও পরামর্শগুলো উত্তরণ-সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন গবেষণা, পরিকল্পনা ও পরাকৌশল প্রণয়নে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের পরিচালক ফরিদ আজিজ। ফরিদ আজিজ তার বক্তব্যে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কী প্রভাব পড়তে পারে, বা নতুন কী সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে, সে বিষয়ে স্থানীয় বেসরকারি খাত বিশেষত রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রতিনিধিদের মধ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০