Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 10:17 am

টেকসই জ্বালানি ছাড়া এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রূপান্তরমুখী জ্বালানি ব্যবস্থার প্রবর্তন ও টেকসই জ্বালানির নিশ্চয়তা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো অর্জন সম্ভব নয়। পাশাপাশি সবার জন্য জ্বলানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন সুলভে পরিবেশবান্ধন জ্বালানির নিশ্চয়তা বিধান করা। একই সঙ্গে উৎপাদন খাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) ‘এলডিসি ২০১৭’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা। গতকাল একযোগে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। আঙ্কটাডের পক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এবারের প্রতিবেদনের বিষয় রূপান্তরমুখী জ্বালানি প্রাপ্যতা। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ২০১৪ সালের বিদ্যুৎ সুবিধার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। তবে সিপিডি বলছে, গত তিন বছরে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ-জ্বালানি প্রাপ্যতার সুবিধা নিশ্চিত করতে এশিয়ার নেপাল ও ভুটান বেশ এগিয়ে আছে। তবে এলডিসিগুলোকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর সাড়ে তিনগুণ হারে বেশি মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে হবে। তবে বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়াতে হবে।

এসডিজিতে বিদ্যুৎ প্রাপ্যতার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জনে এলডিসিগুলোর জন্য চারটি সুপারিশ করেছে আঙ্কটাড। এগুলো হলো শক্তিশালী বিদ্যুৎ কাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সুশাসন ও অর্থায়ন নিশ্চিত করা, উন্নয়নের কৌশল হিসেবে জ্বালানি খাতকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা নেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০৩০ সালে এসডিজি লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সালে যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে, সে দৃষ্টিভঙ্গিতে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতটিকে বিবেচনা করতে হবে। কেননা, জ্বালানি খাতের সঙ্গে তিনটি বিষয় সম্পৃক্ত। এগুলো হলো অর্থনৈতিক রূপান্তর, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য। জ্বালানি উৎপাদন হতে হবে সুলভ মূল্যে, সুশাসনের সঙ্গে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে।

তিনি বলেন, সরকারের কাক্সিক্ষত উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সাশ্রয়ী দামে টেকসই জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ৫৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। এজন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। সুশাসনের সঙ্গে এ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা গেলেই কেবল লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটির ওপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ যেমন লাগবে, তেমনি বিদেশি বিনিয়োগও চাই। এছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তাও দরকার। আর উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের ফলে আমরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তার বিপরীতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ আরও জোরদার করতে হবে।

প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্যতা এখনও একটি বড় সমস্যা। এক সমীক্ষায় দেশের ৫৩ শতাংশ কোম্পানি মালিক বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্যতাই তাদের প্রধান সমস্যা। এশিয়ার আরেকটি এলডিসিভুক্ত দেশ কম্বোডিয়ায় এ হার মাত্র ছয় শতাংশ। আর ভুটানে মাত্র ১২ শতাংশ ব্যবসায়ী এ মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, মাথাপিছু জ্বালানি প্রাপ্যতায় বাংলাদেশ এলডিসির ন্যূনতম সীমার চেয়েও অনেক নিচে অবস্থান করছে। বর্তমানে বছরে মাথাপিছু জ্বালানি তেল প্রাপ্যতা ২২২ কেজি। এলডিসি থেকে বের হতে হলে এটিকে ন্যূনতম ৩৬৪ কেজিতে উন্নীত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।