Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 3:09 pm

টেকসই নগর ও পরিবেশ সুরক্ষায় গ্রিন সিমেন্ট

 

অমৃত চিছাম: সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। একবিংশ শতাব্দীতে এসে অট্টালিকা নির্মাণের পরিমাণ কীরূপ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা সারাবিশ্বের দিকে শুধু একবার তাকালেই যথেষ্ট। পৃথিবীব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অতি দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে আবাসন ব্যবস্থা। আমরা জানি মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি হলো বাসস্থান, মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য যার গুরুত্ব অপরিসীম। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন টেকসই নগরসভ্যতা। নগরসভ্যতা গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের উপাদানের ওপর ভিত্তি করে। এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে টেকসই অবকাঠামোর বিষয়টি। বর্তমান সময়কে বলা হচ্ছে নির্মাণশিল্পের চরম উৎকর্ষের যুগ। আমরা জানি, ভিত্তি মজবুত না হলে বিল্ডিং মজবুত হবে না। আর এর প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে সিমেন্ট। রানা প্লাজাসহ বেশকিছু ভবন নির্মাণে ত্রুটির কারণে ধসে পড়ার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানের সময় উঠে এসেছে, নির্মাণ ত্রুটির অন্যতম একটি কারণ ছিল সিমেন্টের সঠিক ব্যবহার না করা। ভূতাত্ত্বিকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশকিছু অঞ্চল ভূমিকম্পের প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি ভূমিকম্প ছাড়াই বিল্ডিং ধসে পড়ার ঘটনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে অধিক শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প হলে রাজধানীর বিল্ডিংগুলোর কী অবস্থা হতে পারে, তা খুব সহজেই অনুমেয়। কোনো কিছুই এমনি এমনি টেকসই হয়ে ওঠে না। এর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়বস্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শুরুতেই একটু ছোট করে জেনে নেয়া যাক, টেকসই নগর বিষয়টি আসলে কী? টেকসই নগর হলো এমন একটি এলাকা যেখানে বিশেষভাবে প্রযুক্তিগত প্রগতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বিকাশ ঘটে। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণকৌশল গভীর ভূমিকা রাখতে পারে। অবকাঠামো পরিবেশবান্ধব তখনই হতে পারে, যখন টেকসই নির্মাণ পদ্ধতির পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রীও টেকসই হবে। টেকসই নগর উন্নয়নে যে বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে তা হলো সিমেন্ট, বিশেষ করে ‘গ্রিন সিমেন্ট’। সিমেন্ট একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিল্ডিং তৈরির সামগ্রী, যাতে ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের কতকগুলো অনার্দ্র দ্বি-সিলিকেট বর্তমান থাকে। এগুলো পরবর্তী সময়ে পানির সংস্পর্শে এসে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জমাট বেঁধে শক্ত পিণ্ডে পরিবর্তিত হয়। পানির উপস্থিতিতে বালি, পাথরের টুকরা বা ইটের মাঝে অবস্থান করে তাদের সংযুক্ত করে একটি অতিশক্ত পিণ্ডে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে। বিজ্ঞানীদের মতে, ক্লিংকার তৈরি থেকে আরম্ভ করে সিমেন্ট বা কংক্রিট তৈরির এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। কংক্রিট যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে, তার অর্ধেক নিঃসরিত হয় সিমেন্ট তৈরির প্রক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম কার্বনেটের প্রতিক্রিয়ায় আর বাকি অর্ধেক হয় জীবাশ্ম জ্বালানি জ্বালিয়ে ক্লিংকার উৎপাদনের মাধ্যমে, যার ফলস্বরূপ অধিক পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এসব কর্মকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার দরুন পৃথিবীর তাপমাত্রা আগের তুলনায় এখন ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মনুষ্যসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম নিয়ামক হিসাবে ধারণা করা হচ্ছে, যা কিনা কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে, একইসঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবেও কাজ করে। তাপমাত্রা পরিবর্তিত হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। চিন্তার বিষয় যে, গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ঊনবিংশ শতকের তুলনায় বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গত দুই দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ শতাংশ। কার্বন নিঃসরণের পাশাপাশি প্রতি টন সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রায় ১০৫ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ ও ৬০ থেকে ১৩০ কেজি জ্বালানি তেল প্রয়োজন হয়। সিমেন্টশিল্প বিশ্বজুড়ে মোট কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পাঁচ শতাংশ অবদান রাখে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সারাবিশ্বে উৎপন্ন হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্র শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ নিঃসরিত হয় বাংলাদেশে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে অন্যতম একটি হলো আমাদের প্রিয় স্বদেশ। বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন টন সিমেন্ট ব্যবহƒত হয়, যার প্রায় সবই দেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে। সিমেন্ট উৎপাদনে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে বর্তমানে উৎপাদনে থাকা ৩৫টি কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় সাত কোটি ৯০ লাখ টনের বেশি। তবে কার্যকর উৎপাদন ক্ষমতা কিছুটা কম, ছয় কোটি ২০ লাখ টন। দেশে সিমেন্ট বাজারের আকার রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক বেকার মানুষের। প্রতিবছর দেশে সিমেন্টের চাহিদা বছরে তিন কোটি ৯০ লাখ টন। বিশ্বে বর্তমানে টেকসই নগর উন্নয়নে সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম হলো ‘গ্রিন সিমেন্ট’। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখি সবুজ রং পজিটিভ কিছুরই ইঙ্গিত করে, আর যা কি না মানবস্বাস্থ্য তথা পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে। ‘গ্রিন সিমেন্ট’ একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, যা পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। এটি প্রধানত কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে ব্যবহƒত হয় এবং পরিবেশের সৌন্দর্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদান করে। এই সিমেন্টে প্রধানত কার্বন নির্মূল প্রক্রিয়া ব্যবহƒত হয়, যা পরিবেশের ক্ষতি হ্রাস করে। এই কংক্রিটের জন্য সিমেন্ট ক্লিংকার কমিয়ে বিকল্প কাঁচামাল, যেমন সø্যাগ ও লাইমস্টোন বেশি দিয়ে উৎপাদন করা হয়। মেক্সিকোর গবেষকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সিমেন্ট উৎপাদনের সময় শতকরা ৮০ ভাগ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমবে ও শক্তি শতকরা মাত্র ৫০ ভাগ কম খরচেই উৎপাদিত হবে। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিবেচিত বিকল্প কাঁচামালগুলো বিভিন্ন ভারী শিল্প, যেমন স্টিল মিল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। তাই এখন সময় এসেছে কার্যকর কয়েকটি কাঁচামাল বিবেচনায় নেয়ার, যেমন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়া ফ্লাইঅ্যাশের ব্যবহার বাড়ানো, স্টিলশিল্পের অ-লৌহ উপাদান সø্যাগের ব্যবহার বাড়ানো, ফাইবার গ্লাস বা গ্লাসের বর্জ্য, ধান থেকে তৈরি হওয়া ছাই, পোড়া মাটি। বেশিরভাগ শিল্পে পণ্য তৈরির জন্য গরম ভাটাগুলো ব্যবহƒত হয়। এসব ভাটায় পণ্য ঢালাই করা হয়। ভাটায় সø্যাগের ব্যবহার সাধারণত সবুজ সিমেন্ট তৈরির জন্য করা হয়। তাছাড়া ‘গ্রিন সিমেন্ট’ তৈরিতে ফ্লাই অ্যাশও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই ওই সিমেন্ট তৈরির প্রক্রিয়াটি একটি কার্বন-নেতিবাচক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার মাধ্যমে সিমেন্ট তৈরি করা হয়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে উৎপাদন খরচ বহুলাংশে হ্রাস পায়, সেইসঙ্গে পরিবেশবান্ধবও হয়ে থাকে। যদিও ওই প্রক্রিয়ায় কার্বন উৎপন্ন হয়, তবে তা খুব সামান্যই। জেকে সিমেন্টের দেয়া রিপোর্টের এক প্রাপ্ত তথ্যমতে, এই সিমেন্টের গ্রিপ খুব মজবুত হয় ও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। অতি আশ্চর্যের বিষয় যে, ওই সিমেন্ট সাধারণ সিমেন্টের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি জং-প্রতিরোধী। এটি বড় নির্মাণসামগ্রীর জন্য কার্যকর সমাধান হতে পারে। কারণ ওই সিমেন্টে ক্যালসিফাইড কাদামাটি ও চুনাপাথর মিশ্রিত করা হয়। এই উপাদানগুলো ছিদ্র কমাতে সাহায্য করে এবং এর শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি করে। ‘গ্রিন সিমেন্ট’ সাধারণ সিমেন্টের চেয়ে অধিক দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং যা ভবিষ্যতে বর্তমান সিমেন্টের একটি উত্তম বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হবে সারাবিশ্বে। তাছাড়া দেশে এখন পর্যন্ত ক্লিংকার যেহেতু পুরোপুরি আমদানিনির্ভর, কাজেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। দেশে নগর উন্নয়নে কম ফ্লাইঅ্যাশ এবং বেশি ক্লিংকারের সিমেন্টের প্রতি ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ দেখতে পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করে থাকেন, ফ্লাইঅ্যাশ দিয়ে তৈরি সিমেন্টে স্থাপনা খুব বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কিন্তু তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা যে, ওই সিমেন্ট আদৌ টেকসই কি না? এখন সময় হয়েছে এই ধারণাটি বদলানোর। তাদের উৎসাহিত করতে হবে, কারণ গ্রিন সিমেন্ট বিল্ডিংয়ে ব্যবহারযোগ্য জায়গা বেশি থাকে, স্থাপনা শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, আগুনের কিংবা সূর্যের তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি থাকে। সর্বোপরি, গ্রিন কংক্রিটের ভবন লবণসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক দ্রব্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা পায়। প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার বিশ্বে একটি সংকট তৈরি করেছে, যা সবার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে সিমেন্ট কোম্পানির বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের দল সবুজ সিমেন্টের রূপে একটি ভালো ফর্মুলা নিয়ে এসেছে। এই সিমেন্ট নির্মাণব্যয় বহুলাংশে হ্রাস করে এবং এটি একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই করতে হলে শক্তিশালী অবকাঠামো বিনির্মাণ এবং সব ধরনের কাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। টেকসই শহর ও সম্প্রদায় বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে ‘বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০’-এর অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী গৃহীত হয়েছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১১ (এসডিজি-১১)। টেকসই উন্নয়নের জন্য অভীষ্ট-১১ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে চিহ্নিত করেছে; যথা টেকসই নগরায়ণ, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস প্রভৃতি। বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশও পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন একটি দেশ। তাই পরিবেশের এই বিপর্যয় মোকাবিলায় দেশেও পরিবেশবান্ধব সিমেন্টের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে হবে, যা অর্থনীতি, জলবায়ু, মানবস্বাস্থ্য তথা পরিবেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করবে। কাজেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে ক্লিংকারের পরিমাণ কমিয়ে বিকল্প কাঁচামাল ব্যবহার, গ্রিন কংক্রিট বা গ্রিন বিল্ডিংকে উৎসাহিত করা, পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী উৎপাদকদের প্রণোদনা দেয়া এবং নির্মাণকারীদের পরিবেশের বিষয়ে আরও সচেতন করে তোলার মাধ্যমে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি। এখন সময় হয়েছে দেশীয় সিমেন্ট উৎপাদন বা কংক্রিট শিল্পে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার। অন্যথায় উন্নত দেশগুলো একসময় কার্বন নিঃসরণ তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দায় আমাদের ওপরও চাপাবে এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত সাহায্য-সহযোগিতাও কমে যাবে। আশা করি সরকার ও উদ্যোক্তারা এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পরিশেষে আবারও গ্রিন সিমেন্টের ব্যবহার প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে নগরে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে হবে। জনগণকে আরও বেশি বেশি সবুজ সিমেন্ট ব্যবহারের প্রতি উৎসাহী করে তুলতে হবে। এতে দেশে নতুন করে প্রচুর পরিমাণে পরিবেশবান্ধব সিমেন্ট তৈরির কারখানা গড়ে উঠবে। এর ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন, ঠিক তেমনি আমাদের জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধি লাভ করবে। বাংলাদেশ চাইলে দুবাই, আফগানিস্তান ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় এই সিমেন্ট রপ্তানি করতে পারে। শুধু প্রয়োজন একটু সরকারি সহযোগিতার। এদেশে সিমেন্টশিল্পের অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে পরিবেশবান্ধব সিমেন্টশিল্প কারখানার প্রসার ঘটানো সম্ভব। ফলে সিমেন্ট উৎপাদনশিল্পে বাংলাদেশ এশিয়ার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। দেশে পরিবেশবান্ধব সিমেন্ট তৈরির কারখানা গড়ে উঠলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্ব দূর, সর্বোপরি লিঙ্গ সমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা ‘রূপকল্প ২০৪১’ বা ‘বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ অনুযায়ী ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করবে।

শিক্ষার্থী

এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

ত্রিশাল, ময়মনসিংহ