Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:32 am

টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ জরুরি: ডিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি দক্ষ ও টেকসই বাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা খুবই জরুরি বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান।

বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিবদের অংশগ্রহণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত ডিএসই মাল্টিপারপাস হলে ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং ও ডিসক্লোজারস: রেগুলেটরি রিকয়ারমেন্টস’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকে যে বিষয় নিয়ে সেমিনারটিতে আলোচনা করা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ আয়োজন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা তার আর্থিক প্রতিবেদনে জানা যায়। একটি সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানির অবস্থা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে। কারণ আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যে কমপ্লায়েন্স, গভর্ন্যান্স, আর্থিক অবস্থার সঠিকতাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই থাকে। আর্থিক প্রতিবেদন শুধু বিনিয়োগকারী নয়, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রয়োজন। এছাড়া সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্যও সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রয়োজন। একটি দক্ষ পুঁজিবাজারের অন্যতম শর্ত হলো তথ্যসমূহ পরিপূর্ণভাবে সময়মতো প্রকাশ করা। দক্ষ পুঁজিবাজার করতে হলে আমাদের আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও সময়মতো প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি দক্ষ ও টেকসই বাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা খুবই জরুরি। এজন্য ডিএসই ধাপে ধাপে সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য এ ধরনের প্রোগ্রামের আয়োজন করবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মো. আবদুল হালিম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএসইর পরিচালক মো. আফজাল হোসেন।

বিএসইসির কমিশনার মো. আবদুল হালিম বলেন, তালিকাভুক্তির পর দেখা যায় অনেক কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। তাহলে কোম্পানিটি যখন আইপিও’র কাগজপত্র জমা দিয়েছে, সেগুলো অতিরঞ্জিত করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা যারা এই কাজ করি, তারা বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি। এ দেশের নাগরিক হিসেবে দেশের মানুষদের ঠকানোর জন্য এ কাজ করতে পারি না?। আমরা সঠিক তথ্য দেব। সেটা আমাদের দায়িত্ব।

আর্থিক প্রতিবেদনের অস্বচ্ছতা নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা আপনাদের ভয়-ভীতি দেখাই, হেয়ারিংয়ে নিয়ে আসি এবং জরিমানা করি, যাতে আপনারা ঠিক হন। কিন্তু এর পরও আমরা দেখেছি অনেকের বোর্ডে সমস্যা রয়েছে, ঠিকমতো আর্থিক তথ্য প্রকাশ করে না। অন্যান্য কাজ ঠিকমতো করে না। আবার সেগুলো নিয়ে জালিয়াতি করে। এগুলো সাধারণ নিয়মিত কাজ। কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের কাছে আসেন। আমরা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করব। বিধিবিধান সম্পর্কে অধ্যয়ন না করায় অনেকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিপালন করতে পারছেন না। কিন্তু আমরা যারা কোম্পানির সচিব রয়েছি এবং সিএফও রয়েছি, তাদের উচিত বিধি-বিধানগুলো সঠিকভাবে পড়া এবং সেগুলো যথাযথ পালন করা। যদি কোথাও সমস্যা মনে হয় তাহলে আপনারা ডিএসইর মাধ্যমে জানাবেন বা কমিশনকে জানালে আমরা অবশ্যই সেটার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএসইর পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট এবং ডিসক্লোজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে মালিক, বিনিয়োগকারী এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য। কারণ এটার সঙ্গে বড় একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট হচ্ছে মূলত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টদের, যেটায় নিরীক্ষক প্রতিবেদন থাকে এবং সেটার সঙ্গে কিছু সংযুক্ত তথ্য থাকে। এটার সঙ্গে বিস্তারিত তথ্যসহ একটি ফুল ডিসক্লোজ থাকবে, যেটার মাধ্যমে একেবারে সাধারণ যে মানুষও আর্থিক প্রতিবেদনটা বুঝতে পারবে, সেভাবে প্রকাশ করতে হবে। এটা হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিংয়ের মূলকথা। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে এটা আরও বিস্তারিত প্রকাশ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ফুল ডিসক্লোজার থেকেও আরও বেশি তথ্য এবং অ্যানালাইসিস সহকারে প্রকাশ করতে হয়। সেই সঙ্গে প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশনগুলো ডিসক্লোজারের একটি অংশ। তাই আর্থিক প্রতিবেদনগুলো সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য দিয়ে প্রকাশ করা দরকার।

তিনি আর বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মূলত আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। আর এজন্য দুটি পক্ষের দায়িত্ব পালন করতে হবে। একটি হলো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও আরেকটি হলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য আমাদের আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আর ভবিষ্যতে আমাদের এই ধরনের সেমিনার আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা প্রয়োজন। এছাড়া অতীতের সমস্যা কাটিয়ে একটি টেকসই পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বিএসইসির প্রধান হিসাবরক্ষক এবং নির্বাহী পরিচালক কামরুল আনাম খান বলেন, আজকে যে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়েছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আজকের অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত আছেন, তারা নিজ নিজ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেন। মূল প্রবন্ধে আর্থিক প্রতিবেদনে যে ৩৮টি ভুলের কথা বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে আপনারা এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ রাখবেন। সময়মতো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করলে শুধু জরিমানাই হয় না, একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া পুঁজিবাজারে কোম্পানিটি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা হয়। তাই কোম্পানির সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আইনকানুন সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আর এক্ষেত্রে রেগুলেটরের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ডিএসইর প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো শুধু তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্যই নয়, তাদের কর্মচারী, গ্রাহক ও বৃহত্তর সমাজের জন্যও একটি অনন্য দায়িত্ব বহন করে আসছে। আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। প্রয়োজনীয় আইন মেনে চলার মাধ্যমে এই কোম্পানিগুলো জবাবদিহি এবং নৈতিকতা নীতিগুলোকে মেনে স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি সমতা নিশ্চিত করে। আলোচনায় আর্থিক প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা, সর্বোত্তম অনুশীলন এবং চ্যালেঞ্জগুলো উঠে আসবে বলে আমি মনে করি।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর করপোরেট গভর্ন্যান্স এবং ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান মো. মাসুদ খান। মূল প্রবন্ধে তিনি আর্থিক প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য, আর্থিক বিবরণী জমা দেয়ার নিয়ম, প্রবিধান, বিজ্ঞপ্তি এবং সময়সীমা, আর্থিক বিবৃতিগুলোর প্রধান অসংগতি ও নন-কমপ্লায়েন্স এবং প্রশমনের উপায় নিয়ে আলোকপাত করেন।