যখন বাজারে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ সমস্যাটি যাতে দীর্ঘায়িত না হয় সেজন্য দ্রুত সমাধান করা। দীর্ঘমেয়াদি টেকসই বাজারনির্ভর করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতার ওপর। আসলে এ পুঁজিবাজার দক্ষ বাজার নয়। যার জন্য বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। তাহলে বুঝতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অদক্ষতার কারণে এমনটি হচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক বাকী খলীলী এবং এএফপির ব্যুরো চিফ মো. শফিকুল আলম।
অধ্যাপক বাকী খলীলী বলেন, যখন বাজারে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ সমস্যাটি যাতে দীর্ঘায়িত না হয় এবং সেটির দ্রুত সমাধান করা। কিন্তু এ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ রকম কোনো কিছু করতে দেখা যাচ্ছে না। যেটা দেখে বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগের নিশ্চয়তা পাবেন। একটি কোম্পানি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাজারে আসে। কোম্পানির যাবতীয় তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দিতে হয়। ওই তথ্যগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করার কাজ হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার। অর্থাৎ তথ্যগুলো কতটুকু সত্য বা বিশ্বাসযোগ্য এবং এটি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো কোম্পানি কিনা। কিন্তু গত কয়েক বছরে যেসব কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে আসছে, তাদের তথ্যের সঙ্গে কোনো মিল দেখা যায় না। এতে বোঝা যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভালোভাবে পর্যালোচনা করে না। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি শক্তিশালী রিসার্চ সেল থাকা দরকার। যেটা বাজার নিয়ে গবেষণা করবে এবং যেসব কোম্পানি বাজারে আসে সেটার যাবতীয় তথ্য সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে। কিন্তু এ ধরনের গবেষণার জন্য কোনো রিসার্চ সেল নেই। দীর্ঘমেয়াদি টেকসই বাজারনির্ভর করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতার ওপর। আসলে এ পুঁজিবাজার দক্ষ বাজার নয়। যার জন্য বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ সঠিকভাবে কাজ করছে না। তাহলে বুঝতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অদক্ষতার কারণে এটি হচ্ছে।
মো. শফিকুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাজার খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাজারের এমন দুরবস্থার কারণে বিনিয়োগকারী প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছেন। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। আর এ আস্থাহীনতা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। আস্থাহীনতা ছাড়াও বাজারে আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। এক দিকে তারল্য সংকট রয়েছে। এটি নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছে। এ সমস্যা উত্তরণে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আবার ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে ভালোমানের কোম্পানি আনতে হবে। ২০১০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রায় ২৭টি কোম্পানি আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২০০৮ সালে তিতাস গ্যাসের পর এ ১১ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো কোম্পানি বাজারে আসেনি। বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে অতিদ্রুত দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ দেখতে চাই। যেটা বাজারে একটি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বিনিয়োগকারীর কাছে টাকা আছে। অর্থনীতির আকার অনুযায়ী পুঁজিবাজার অনেক ছোট। অন্যান্য দেশের জিডিপির সঙ্গে তুলনা করে তাদের পুঁজিবাজার মূল্যায়ন করা হয়। সত্যিকার অর্থে বিনিয়োগকারীরা চান এখানে ভালোমানের ইকুইটি থাকবে। শুধু ইকুইটি নয়, বাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্যও থাকবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ