টেনে তোলা যাচ্ছে না বাজার ভারী হচ্ছে লোকসানের পাল্লা

নিজস্ব প্রতিবেদক: লেনদেন বাড়িয়ে প্রধান সূচক টেনে তোলার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ক্রমাগত দর হারিয়ে চলেছে তালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর। ফলে ক্রমাগত কমছে বাজার মূলধন।

শুধু ১৩ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে বাজার মূলধন হারিয়েছে তিন হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহে হারিয়েছে পাঁচ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন হারিয়েছে ৯ হাজার ৪৪২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার লেনদেন তথ্য ও বাজার বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৩টি কোম্পানি ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৭৬টির, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫১টিতে। দর হারায় ২৮০টি, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩২৪টিতে, দর অপরিবর্তিত ছিল ২৮টির ও লেনদেন হয়নি ৯টির। মোট লেনদেন কমেছে আগের সপ্তাহের চেয়ে ২৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। যদিও গত সপ্তাহে একদিন কম লেনদেন হয়েছে পহেলা বৈশাখের জাতীয় ছুটির কারণে।

তথ্য বলছে, এ সময় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল প্রকৌশল, বিবিধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। শুধু কাগজ ও মুদ্রণ, পাট এবং ওষুধ খাতের শেয়ারে মুনাফা দেখতে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। অবশিষ্ট সব খাতের শেয়ারের দর পতন হয়েছে আগের সপ্তাহের চেয়ে। অন্যদিকে এ সময় ডিএসইর মোট লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছে বিবিধ খাত, প্রকৌশল ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এদিকে টানা পতনের হাত থেকে বাজার রক্ষা করতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধিতে অংশীজনদের উৎসাহ দিয়ে চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান আইসিবি, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানকে চিঠির পাশাপাশি মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এসব করা হচ্ছে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে। কিন্তু সিন্ডিকেটের ভয়ে এসব উদ্যোগ খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না বলে মনে করছেন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই শতাংশ পতনের সার্কিট ব্রেকার বাজারকে বড় ধরনের পতন থেকে রক্ষা করে চলেছে। বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দো-টানা মনোভাব রয়েছে। এজন্য প্রতিনিয়ত শেয়ার বিক্রয়ের চাপ রয়েছে। নতুন ক্রেতা সেভাবে না পাওয়ায় বিক্রয় চাপে শেয়ারের দরপতন ঘটছে। বিশেষ করে বিতর্কিত ও সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কারণ ছাড়াই দর বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। অনেকে বুঝে উঠতে পারছেন না, কোন শেয়ারে সিন্ডিকেট ভর করেছে।

এজন্য ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ারেরও দরপতন ঘটছে। গত সপ্তাহে শেয়ারের দর হারানোর তালিকায় থাকা শীর্ষ দশটির মধ্যে ৯টিই ‘এ’ ক্যাটেগরির। এজন্য মৌলভিত্তির ছাড়া সব খাতের শেয়ারই বিক্রয় করে পুঁজি তুলে নিচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের শেয়ারের প্রতি ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। এজন্য বেছে নিচ্ছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক খাতের শেয়ার। এ সময় ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে। তাই ডিভিডেন্ড পেতে অনেকে এসব শেয়ারের প্রতি কিছুটা ঝুঁকে পড়ছেন।

ডিএসইর তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হারিয়েছে ৫৬ দশমিক ২৬ পয়েন্ট, ডিএসই৩০ হারিয়েছে ১১ দশমিক ১৪ পয়েন্ট ও ডিএসইএস হারিয়েছে পাঁচ দশমিক ৮২ পয়েন্ট।

খাতভিত্তিক লেনদেন তথ্য ও দর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে সর্বোচ্চ চার শতাংশ মুনাফা দেখতে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এরপর রয়েছে পাট খাতে শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ এবং ওষুধ খাতে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ।

অন্যদিকে লোকসানের দীর্ঘ তালিকায় রয়েছেÑট্যানারি দুই দশমিক আট, সেবা দুই দশমিক ছয়, আইটি দুই দশমিক চার, ব্যাংক এক দশমিক ৯, টেলিকম এক দশমিক ৯, বস্ত্র এক দশমিক ছয়, সাধারণ ও জীবন বিমা খাতের দুটোতেই এক দশমিক ছয় শতাংশ করে ও প্রকৌশল খাতে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ লোকসান দেখতে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহ শেষে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে, ‘এন’ ক্যাটেগরির জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং। কোম্পানিটির শেয়ারের দর সর্বোচ্চ ৪৫ দশমিক ৬১ শতাংশ বাড়ে। এ সময় শেয়ারটির লেনদেন হয় ৬৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার। এরপর থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের দর বাড়ে ১১ দশমিক ৪৫, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ১০ দশমিক ১৫, সোনালী পেপার  ও বোর্ড মিলসের আট দশমিক ৫০ ও এপেক্স ট্যানারির আট দশমিক ৪৫ শতাংশ।

অন্যদিকে শেয়ারের দর হারানোর শীর্ষ তালিকায় স্থান পায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক সাত দশমিক ৫০, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল সাত দশমিক ৪৮, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের সাত দশমিক ৪১ ও জিবিবি পাওয়ারের ছয় দশমিক ৯৮ শতাংশ। একক কোম্পানি হিসেবে টাকার অঙ্কে সর্বোচ্চ পরিমাণে শেয়ার লেনদেন করে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০