নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিলার হাউসের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (এসআর), সুপারভাইজার এবং ব্যান্ড প্রোমোটারদের (বিপি) বেতন বাবদ কমপেনসেশন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের চলতি মাস পর্যন্ত সব বকেয়া কমপেনসেশন ১৩ কোটি টাকা অবিলম্বে পরিশোধ করাসহ ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে টেলিটক ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক মো. রেজাউল করিম জাহাঙ্গীর।
অ্যাসোসিয়েশনের অন্য দাবিগুলো হচ্ছেÑপ্রত্যেক ডিলার থেকে নেয়া পল্লী বিদ্যুৎ/টেলিচার্জ বাবদ অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট সাড়ে ৭ কোটি অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে; ডিলার এবং রিটেলারদের পাওনা শতবর্ষ, বর্ণমালা স্বাগতম এবং অপরাজিতা প্যাকেজের ইউজেস কমিশন অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে এবং অপরাজিতা প্যাকেজের এসএএফ কমিশন প্রদান করতে হবে; টেলিটক হতে অব্যাহতি নেয়া সকল ডিলারদের সিকিউরিটি ডিপোজিটসহ সকল পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে এবং কিছু অসাধু কর্মকর্তা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কমপেনসেশন দেয়ার আগেই ৩০ শতাংশ টাকা অগ্রিম নিয়ে কমপেনসেশন দেয়া হতো, সেই ৩০ শতাংশ টাকা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের সংস্কারমূলক দাবিগুলো হচ্ছেÑবিগত সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংস্কার করতে হবে এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) কর্মকর্তাদের টেলিটকে নিয়োগ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে; মার্কেটে সিম চাহিদা মোতাবেক প্রদান করতে হবে এবং নতুন প্যাকেজের সিম আনতে হবে; টেলি পে অ্যাপস আপগ্রেড করতে হবে এবং অ্যাপসের যে কোনো সমস্যার সমাধান দ্রুততম সময়ে করতে হবে এবং সিম অ্যাক্টিভেশন অ্যাপ আপগ্রেড করতে হবে; সব টাওয়ারে ব্যাটারি ব্যাকআপের ব্যবস্থা করতে হবে; রিটেলারদের বিভিন্ন অফার সেলে এক্সট্রা কমিশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া মাদার সিম থেকে এসআর সিমে টাকা ট্রান্সফার করার পর অবিকৃত টাকা মাদার সিমে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে; রিটেলারদের এনএমপি করার সুযোগ দিতে হবে এবং প্রত্যেকটা এনএমপির জন্য কমিশন প্রদান করতে হবে; দ্রুততম সময়ে সব টুজি টাওয়ারকে ফোরজিতে রূপান্তর করতে হবে এবং ডেটা ব্যবহারের জন্য স্পেশাল স্টুডেন্ট সিম প্যাকেজ আনতে হবে। লিখিত বক্তব্যে রেজাউল করিম বলেন, আমাদের মাসিক এসআর, সুপারভাইজার এবং বিপিদের বেতন বাবদ কমপেনসেশন, বর্তমান জিএম সর্বশেষ অক্টোবর নভেম্বর ও ডিসেম্বর ২০২১ সালে প্রদান করেছেন। কিন্তু জানুয়ারি ২০২২ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছে। টেলিটক প্রথমে প্রত্যেক ডিলারের কাছ থেকে জামানতস্বরূপ এক লাখ টাকা করে নেয় এবং পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুৎ/টেলিচার্জ বাবদ সারাদেশের ডিলারদের কাছ থেকে ২০১৯ সালে ডিলারপ্রতি ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট নেয়।
কিন্তু বছরখানেক পর কিছু অসাধু কর্মকর্তা পল্লীবিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওয়ার বাই টেলিটক হিসেবে চুক্তি করে। যাতে ডিলারদের বিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা কমতে শুরু করে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসে। তাহাদের এ কর্মকাণ্ড দেখে আমরা টেলিটককে বাঁচিয়ে রাখতে, টেলিটকের মার্কেটকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে কয়েকবার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনা করি। কিন্তু তারা আমাদের বিষয়গুলো আমলে নেয়নি।
তিনি বলেন, অনেক ডিলার তাদের স্বেচ্ছাচারিতা সহ্য করতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন বা অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় অনেক ডিলারের সঙ্গে এই ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। টেলিটক থেকে অব্যাহতি নেয়া ডিলারদের জমা করা জামানতের টাকা, বকেয়া কমপেনসেশন, বিভিন্ন সময় পাওনা সিম কমিশনের টাকা চাওয়া হলে টেলিটক ম্যানেজমেন্ট অব্যাহতি নেয়া ডিলারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট টেলিটকের এমডি ও জিএমের সঙ্গে আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে মিটিং করা হলে তিনি কোনো আশানুরূপ সমাধান দিতে পারেননি। তাই আমরা ডিলাররা বাধ্য হয়ে আমাদের সমুদয় পাওনাদি এবং টেলিটককে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে আজকের এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের মূল দাবি এবং সংস্কারমূলক দাবিগুলো নিম্নে বর্ণনা করতে বাধ্য হলাম।
সংবাদ সম্মেলন থেকে হুঁশিয়ারি করে রেজাউল করিম জাহাঙ্গীর বলেন, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বর্তমান ও সাবেক ডিলারদের ন্যায্য পাওনাগুলো আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেয়া পর্যন্ত সারাদেশের সব ডিলার লিফটিং এবং মার্কেটিং বন্ধ রাখবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনÑসমন্বয়ক মো. নুরুল ইসলামসহ অন্য ক্ষতিগ্রস্ত ডিলাররা।