জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধনকৃত টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর। এটির যাত্রা ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটির প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ধারণা ছিল গ্রাহকদের উন্নতমানের পণ্য ও টেলিকমসেবা দেয়ার পাশাপাশি এ খাতের কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা রোধেও ভূমিকা রাখবে টেলিটক। সিম বিক্রির প্রথম দিন মানুষের ভিড় ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তৎপর হতে হয়।
টেলিটকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটির প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত জনবলের ১০০ শতাংশই এ দেশীয়। ফলে এটি ‘আমাদের ফোন’ই হওয়ার কথা। টেলিটকের লক্ষ্য ছিল, সর্বস্তরের মানুষের কাছে মোবাইল ফোন সেবা পৌঁছে দেয়া, পাবলিক ও প্রাইভেট খাতে সমান প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা, মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজলভ্য করা, দেশীয় অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করা। টেলিটক লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে কিনা বা দেশের মোবাইল ফোন খাতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে কিনা, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অবশ্য কার্যক্রম শুরুর দিনই কোম্পানিটি অর্জন করে সার্টিফিকেট অব কমেন্সমেন্ট অব বিজনেস।
সোমবার শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘টেলিটকের কাছে পাওনা ১৩ কোটি টাকা চান ডিলাররা’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠক বিশেষ করে গ্রাহকদের হতাশ করবে বলেই ধারণা। ডিলার হাউসের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (এসআর), সুপারভাইজার এবং ব্যান্ড প্রোমোটারদের (বিপি) বেতন বাবদ কমপেনসেশন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের চলতি মাস পর্যন্ত সব বকেয়া কমপেনসেশন ১৩ কোটি টাকা অবিলম্বে পরিশোধ করাসহ ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে টেলিটক ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি। এর বাইরে সংগঠনটির অন্য দাবিগুলো হচ্ছেÑ টেলিটক হতে অব্যাহতি নেয়া সব ডিলারকে সিকিউরিটি ডিপোজিটসহ পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে এবং কিছু অসাধু কর্মকর্তা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কমপেনসেশন দেয়ার আগেই ৩০ শতাংশ টাকা অগ্রিম নিয়ে কমপেনসেশন দেয়া হতো, সেই ৩০ শতাংশ টাকা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাইসেন্স পেয়ে ফোরজি প্রযুক্তি চালু করে তিন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। তবে এর আগে থ্রিজির সময় সব অপারেটরকে একই দিনে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। যদিও টেলিটক বাদে অন্য অপারেটরগুলো এক বছর পর থ্রিজি সেবা চালু করার অনুমতি পায়, তবে টেলিটক তখনও কোনো সুবিধা করতে পারেনি। টেলিটক অন্য অপারেটরের চেয়ে বেশি রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পায় এটি সত্য। কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি, এটি দুঃখজনক। গ্রাহক সেবায় পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি অন্য অংশীজনদের সঙ্গেও দায়িত্বশীল আচরণ করছে না টেলিটক। ডিলারদের যৌক্তিক দাবি দ্রুত মেনে না হলে গ্রাহকদের ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা মনে করি, প্রতিশ্রুতি কার্যকরের অগ্রগতি পর্যালোচনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হলে টেলিটকের কাজে গতি আসবে।