টেলিনরের গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট: পাঁচ বছরে গ্রামীণফোনের বিনিয়োগ ১১৭ কোটি ডলার

পলাশ শরিফ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোন পাঁচ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১১৭ কোটি ৬০ ডলার বা প্রায় ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। নেটওয়ার্ক অবকাঠামো উন্নয়ন ও থ্রিজি লাইসেন্স সংগ্রহে এর বড় অংশ ব্যয় করা হয়।

গ্রামীণফোনের সিংহভাগ শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান টেলিনর প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট রিপোর্টে’ এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি ১৯টি দেশে প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বজুড়ে মোবাইল ফোন সেবাদানকারী টেলিনর গ্রুপের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ছয়টি ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩টি বাজারে টেলিনর গ্রুপের আর্থসামাজিক প্রভাবের চিত্র তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণফোন গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সরকারকে প্রায় ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার রাজস্ব দিয়েছে। এছাড়া গত দুবছরে দেশের রাজস্ব আয়ের তিন দশমিক চার শতাংশই গ্রামীণফোন থেকে এসেছে বলে দাবি করেছে টেলিনর।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ক্রমবর্ধমান গ্রাহক ও বাজার প্রতিযোগিতার কারণে পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে মূলধনি বিনিয়োগ করেছে টেলিনর গ্রুপের সহযোগী কোম্পানি গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোনের মাধ্যমে এ সময় বাংলাদেশে প্রায় ১১৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে টেলিনর। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই গ্রামীণফোন বিনিয়োগ করেছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অন্যদিকে একই সময় এশিয়ায় টেলিনরের মূলধনি বিনিয়োগ ছিল ১৮০ কোটি ডলার।

নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ মূলধনি খাতে বড় আকারের বিনিয়োগের জেরেই প্রায় পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ গ্রাহক নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের টেলিকম খাতের শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন।

এ প্রসঙ্গে কোম্পানিটির সিইও পেটার বি ফারবার্গ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দেশের প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলোয় গ্রামীণফোনের কার্যক্রম যেভাবে প্রভাব ফেলছে, তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। গ্রামীণফোন বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিবর্তনে মনোযোগ দেওয়ায় আমরা আরও সামাজিক ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন প্রত্যাশা করছি। টেলিনর গ্রুপ বাংলাদেশে তার পথচলা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেলিনরের হাত ধরে এই দেশ ও জাতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পেরে গ্রামীণফোন গর্বিত।’

প্রতিবেদনে চারটি মূল বিষয়ের ওপর টেলিনরের প্রভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিসহ অর্থনীতি বিস্তৃতি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও লৈঙ্গিক সমতার উন্নয়ন, সরবরাহ লাইনের টেকসই উন্নয়ন, টেলিনরের প্রভাব ও সঙ্কটময় অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে কর ও অন্য সরকারি ফি হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে গ্রামীণফোন। ২০১৪ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দুবছরে মোট ৬৪ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়, যা বাংলাদেশ সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের তিন দশমিক ৪০ শতাংশ। এ সময় থ্রিজি লাইসেন্স সংগ্রহ ও টুজি লাইসেন্স নবায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি।

অন্যদিকে পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১৫০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের (১২ হাজার কোটি টাকা) মূল্য সংযোজন করেছে গ্রামীণফোন, যা দেশের অর্থনীতিতে মোট মূল্য সংযোজনের শূন্য দশমিক আট শতাংশ ও প্রযুক্তি খাতের ৩০ দশমিক আট শতাংশ।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের প্রায় ১৩৫ কোটি তিন লাখ শেয়ার পুঁজিবাজারে রয়েছে। সবশেষ ২০১৫ সালে এক হাজার ৯৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিটি। এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ১৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে তারা। তালিকাভুক্তির পর থেকে মুনাফায় ঊর্ধ্বগতির কারণে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। সবশেষ কার্যদিবসে গতকাল গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ার ৩০৬ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০