টেলিফোন নম্বরবিহীন বিশ্ব

ফিনল্যান্ডের আইটি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী জুকো আভেনেইনেন টেলিফোন নম্বরবিহীন এক বিশ্বের কথা বলেছেন। তার সেই স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন টেলিকম এশিয়াকে। তারই কিছু চৌম্বক অংশ তুলে ধরেছেন

 

জাবির হোসেইন: কিছুদিন আগে এশিয়ার নানা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছি। দেশগুলোতে কয়েকটি মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি। উপস্থিত অনেকে আমাকে তাদের সেলফোন নাম্বার দিয়েছিলেন। আমার নাম্বারও চেয়েছিলেন অনেকে। হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কেউ কেউ। সমস্যা হলো, আমার অনেকগুলো ফোন নাম্বার। আমি যেখানে ভ্রমণ করি, সেখানকার প্রি-পেইড সিম কিনে নিই। আমি সব সময়ই অনলাইনে থাকি, কিন্তু আগে থেকে আমি জানি না আমার নম্বর কী হবে? প্রশ্ন হচ্ছে, কেন আমরা এখনও ফোন নাম্বার নিয়ে পড়ে থাকব?

বছরখানেক আগে আমি নকিয়া নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তখন নাম্বারিং সিস্টেম নিয়ে অনেক কিছু জেনেছি। বলা চলে, অনেক গভীর বিষয় জেনেছিলাম। যেমন নাম্বারিং সিস্টেমের ইতিহাস, এর পথচলা ও তা কীভাবে সব ধরনের সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে কাজ করবে ইত্যাদি। আমি কিছু সময় নকিয়ার নাম্বার পোর্টেবিলিটি সিস্টেমে কাজও করেছি।

বর্তমানে ওইসব ব্যাপারে আমার দক্ষতা বেশ কমে গেছে। তবে আমি জানি, টেলিফোন নেটওয়ার্কে এখনও প্যাকেট সুইচিং ব্যবহার করা হয়। এখনও কথা বলার জন্য নম্বর ব্যবহার করতে হয়। নাম্বারিং সিস্টেম থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমাদের অনেক দিন অপেক্ষা  করতে হবে। কেননা মানুষ নাম্বারিংয়ের সঙ্গে বেশি পরিচিত। তবে যোগাযোগের জন্য নানা অ্যাপ যেমন হোয়াটস অ্যাপ, ই-মেইল, স্কাইপ, গুগল হ্যাংআউট প্রভৃতিতেও মানুষ অভ্যস্ত হচ্ছে।

এসব বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত ক্যারিয়ার নেটওয়ার্ক। কেননা নম্বরবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তাদের ব্যবসায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। এজন্য তারা স্কাইপে কথাবার্তার প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি করেছে। যে কারণে অনেক স্কাইপে গ্রাহক অজান্তে ফ্রি কল করে বসেন। নেটওয়ার্ক ক্যারিয়ার-বিকল্প এ মাধ্যমগুলো বন্ধ করার চেষ্টাও করেছে।

কোনো কোনো দেশে ব্রডব্যান্ড কানেকশনের জন্য ল্যান্ডলাইন ফোন নিতে গ্রাহককে বাধ্য করছে ক্যারিয়ারগুলো। যুক্তরাজ্যের কথাই ধরুন। সেখানে টেলিফোন নম্বর ছাড়া ব্রডব্যান্ড কানেকশন এক কথায় অসম্ভব। উন্নত একটি দেশের এ ব্যাপারটি কী হাস্যকর নয়?

আসলে মানুষ পুরোনো ধ্যান-ধারণা ধরে রাখতে চায়। ফিনটেকেও একই অবস্থা। ব্যাংকিং সিস্টেমে সেকেলে মডেলের অ্যাকাউন্ট নাম্বার ছাড়া টাকা জমা রাখা কিংবা কোথাও পাঠানো যেতো না। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট নাম্বার প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৫০ সালের দিকে। পরে ব্যাংকে কম্পিউটারের প্রচলন শুরু হয়। দীর্ঘদিন ব্যাংকিং কম্পিউটার শুধু নাম্বার দিয়েই গ্রাহককে চিনতো। সেসব দিন গত হয়েছে। এখন অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনেক সহজে লেনদেন করা হয়।

যাই হোক, পুরোনো মডেলের নাম্বার সিস্টেমে নিজেকে যুক্ত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সহজে যোগাযোগের নানা উপায় আবিষ্কার হয়েছে। তবে নাম্বারিংয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতে চান অনেকে। হয়তো তারা আজীবন যোগাযোগের জন্য ফোন কলটাকেই শ্রেয় মনে করবেন। আর এমন মানুষের ওপরই নির্ভর করে ক্যারিয়ারগুলো অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে।

আশার কথা, কিছু কিছু ফোন কোম্পানি সিমকার্ডের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের ফোন থেকেই ক্যারিয়ার নেটওয়ার্ক সুবিধা দিতে চায়। অ্যাপলের ডিভাইসগুলো মূলত ডেটা টার্মিনাল হিসেবে কাজ করে ও ওয়াই-ফাই সংযোগের মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যে নিয়ন্ত্রক সংস্থগুলো নাম্বার পোর্টেবিলিটি পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতো, তাদের এখন নিজেদের ক্যারিয়ারগুলোকে আরাধ্য বস্তুতে পরিণত করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া উচিত।

সুতরাং আদিকালের নাম্বার সিস্টেম বাদ দিয়ে সামনে এগিয়ে চলা উচিত। আমরা চাইলে টেলিফোন নেটওয়ার্কের মধ্যে নাম্বারগুলো এখনও রাখতে পারি। তবে যেখানে ইউজার আইডি বা আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব, সেখানে নাম্বার রাখার জন্য জোর খাটানো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। সঙ্গত কারণে এ ধরনের আইডিয়া ক্যারিয়ার পিপলদের পছন্দ হবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০