টেস্টে হোয়াইটওয়াশই হলো বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক: ঘরের মাঠে সব সময় প্রতিপক্ষের জন্য স্পিন ফাঁদই তৈরি করে বাংলাদেশ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু চট্টগ্রামের পর ঢাকা টেস্টেও নিজেদের পাতা সেই ফাঁদেই সর্বনাশ হয়েছে মুমিনুল হকের দলের। উভয় টেস্টেই জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে স্বাগতিকরা হেরেছে একবারে শেষ দিকে গিয়ে। এর ফলে ২-০-তে সিরিজ হেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশই হতে হয়েছে টাইগারদের। ঘরের মাটিতে যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের হলো ৯ বছর পর। আগেরটিও ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই।

জয়ের জন্য ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের দরকার ছিল মাত্র ২৩১ রান। হাতে ছিল পুরো দেড় দিনেরও বেশি সময়। লক্ষ্যে ছোটার শুরুটা তামিম ইকবালের সৌজন্যে দারুণ হয়েছিল টাইগারদের। কিন্তু একটা সময় দ্রুত রান তুলতে গিয়ে তিনি ফেরার পর ছন্দপতন হয় স্বাগতিকদের। শেষদিকে অবশ্য আশা জাগিয়ে ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। একপ্রান্ত আগলে রেখে দারুণ খেলেন তিনি। তারপরও শেষ রক্ষা করতে পারেননি এ ডানহাতি। এক দিন আগেই বাংলাদেশ হেরে বসে মাত্র ১৭ রানে।  

বাংলাদেশের পাতা স্পিন ফাঁদে দারুণ সুবিধা নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রাকিম কর্নওয়াল, জোমেল ওয়ারিক্যান ও ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণেই পথ হারায় বাংলাদেশ। ২৩১ রানের লক্ষ্যে ছোটা দলটি গুটিয়ে যায় ২১৩ রানে। এর আগে তাইজুল ইসলাম ও আবু জায়েদ রাহীর তোপে দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয়দের মাত্র ১১৭ রানে অলআউট করেছিল টিম টাইগার্স। কিন্তু বোলারদের সাফল্য দিন শেষে মিলিয়ে দেন ব্যাটসম্যানরা। এর ফলে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের পয়েন্টের ঘর শূন্যই থেকে গেল।

মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ২০৯ রানের, বাংলাদেশের বিপক্ষে যা করেছে ইংল্যান্ড। এদিকে সব মিলিয়ে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ২১৫ রানের, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। ২৩১ রান তাড়া করতে গেলে সে ক্ষেত্রে রেকর্ডই নতুন করে লিখতে হতো বাংলাদেশকে। গতকাল সে সম্ভাবনা ভালোভাবেই জাগিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটির ৫৯ রান। তবে দ্রুতই সৌম্যর (১৩ রান) বিদায়ে তাতে ধাক্কা লেগেছিল টাইগার শিবিরে। যদিও অন্যপ্রান্তে আগ্রাসী তামিম ‘ওয়ানডে গতিতে’ ব্যাটিং করছিলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটিতে তামিম পৌঁছান ৪৪ বলে, ৯ চারে। তাই বাংলাদেশের জয় সহজই মনে হয়েছিল ভক্তদের। ঠিত সে সময়ই কর্নওয়ালের নিরীহ এক বলে তামিম ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফিরে যান। সেই রেশ না কাটতেই চা বিরতির আগে শেষ বল বনে যাওয়া রাকিম কর্নওয়ালের হঠাৎ বাউন্স পাওয়া ডেলিভারিতে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বসেন নাজমুল হোসেন (১১)। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে যায়।

চা বিরতির পর বাংলাদেশকে কক্ষপথে ফেরাতে চেষ্টা করেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। দুজনে দলের রান ১০০ পার করে দেন। ঠিক সে সময়ই ওয়ারিক্যানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক ফেরেন। এর ১৮ বল পর সাজঘরের পথ ধরেন মিথুনও। দলের রান তখন ৫ উইকেটে ১১৮। এরপর লিটন আর মুমিনুল হক ষষ্ঠ উইকেটে কিছুক্ষণ সময় কাটান। জুটিতে তোলেন ৪৭ বলে ৩২ রান, যে কারণে ফের আশা জেগেছিল টাইগার শিবিরে। কিন্তু কর্নওয়ালের দারুণ এক বাউন্সি স্পিনে ক্রসে ব্যাটে খেলে নিজের উইকেট বিলিয়ে দলের বিপদ বাড়িয়ে ফেরেন মুমিনুল। এর ১৯ বল পর ফেরেন লিটনও। তখনও জিততে টাইগারদের দরকার ৭৮ রান। সে সময় একপ্রান্ত আগলে রেখে বুক চিতিয়ে লড়াইটা চালিয়ে যান মেহেদি হাসান মিরাজ। অষ্টম উইকেটে তাইজুলের সঙ্গে মিরাজ ২৯ বলে গড়েন ১০ রানের জুটি। এদিকে নবম উইকেটে নাঈম হাসানের সঙ্গে সেই তিনিই ৩৪ বলে ২৫ রানের আরেকটি জুটি গড়ে জয়ের বার্তায় দিয়েছিলেন। জুটি ভাঙতে বল হাতে নিয়ে আবারও সফল হন ব্র্যাথওয়েট। এবার তার শিকার নাঈম হাসান। মিরাজ তবু হাল ছাড়েননি। শেষ সঙ্গী আবু জায়েদকে নিয়ে কর্নওয়ালের পরপর দুই ওভারে মারেন দুটি করে ছক্কা ও চার। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। ৩১ রানে সিøপে ধরা পড়ে হতাশায় থমকে দাঁড়ান মিরাজ। সঙ্গে সঙ্গে ১৭ রানের হার নিশ্চিত হয় টাইগারদের।

প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে রাকিম কর্নওয়ালের শিকার ৪ উইকেট। এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে এক টেস্টে ৯ উইকেট পেলেন কোনো ক্যারিবিয়ান স্পিনার।

এর আগে গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে। কিন্তু তাদের বেশিদূর এগোতে দেননি তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। লাঞ্চের পরই তাইজুল ৪ উইকেট আর নাঈম হাসান ৩ উইকেট তুলে নিয়ে অতিথিদের ১১৭ রানেই গুটিয়ে দেন। তাই জিততে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩১। কিন্তু এ রানই দিন শেষে টাইগারদের কাছে হয়ে দাঁড়ায় অতিরিক্ত বোঝা হয়ে। এর ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছেÑহার। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দুঃসহ এ যন্ত্রণা থেকে কবে বের হবে বাংলাদেশ, এখন এটাই প্রশ্ন সবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৪০৯

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৯৬

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৫২.৫ ওভারে ১১৭ (বোনার ৩৮, ওয়ারিক্যান ২, মেয়ার্স ৬, ব্ল্যাকউড ৯, জশুয়া ২০, জোসেফ ৯, কর্নওয়াল ১, গ্যাব্রিয়েল ১*; তাইজুল ২১-৪-৩৬-৪, নাঈম ১৫.৫-৫-৩৪-৩, মিরাজ ৬-১-১৫-১, আবু জায়েদ ১০-৪-৩২-২)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২১৩ (লক্ষ্য ২৩১) (তামিম ৫০, সৌম্য ১৩, শান্ত ১১, মুমিনুল ২৬, মুশফিক ১৪, মিথুন ১০, লিটন ২২, মিরাজ , তাইজুল ৮, নাঈম ১৪, ; কর্নওয়াল ১০.৩-২-২৬-১, জোসেফ ২-০-১৬-০, গ্যাব্রিয়েল ২-০-৮-০, ওয়ারিক্যান ১৪-২-৪৭-২, ব্র্যাথওয়েট ১১-১-২৫-৩)

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী

সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ী

ম্যাচসেরা: রাকিম কর্নওয়াল

সিরিজসেরা: এনক্রুমা বোনার

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০