নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মহাসড়কগুলোর সেতু থেকে টোল আদায়ের পাশাপাশি এবার মহাসড়ক ব্যবহারের ওপর টোল আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকালের সভায় ‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদনের প্রাক্কালে আলোচনায় এ নির্দেশ দেন তিনি।
সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দেশের মহাসড়কগুলোয় পৃথক টোল বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। টোলের মাধ্যমে আদায় করা অর্থ মহাসড়কের উন্নয়নে ব্যবহারেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও আপাতত ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ এ চার মহাসড়কে টোলের ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিজে আমরা টোল নিই। এখন ব্রিজ ছাড়াও রাস্তার ওপর টোল বসানো হবে। সারা বিশ্বে তা-ই আছে। টোলে কত টাকা নির্ধারণ হবে, সেটা ঠিক করব এখন। কারণ, এভাবে আর পারা যাবে না।’
কীভাবে টোল আদায় হবে তা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে আমরা যেটি দেখেছি, সেকশন সেকশন হয়। ধরুন, ২০০ মাইল রাস্তা। প্রত্যেক ৫০ মাইলে একটি গেট থাকে। স্থানীয় গাড়িগুলো ১০ মাইল গিয়ে আরেক রাস্তায় গেলে টোল আসবে না। লং ডিসটেন্স ট্রাভেলারদের (দূরবর্তী যানবাহন) জন্য এটা হবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ করবেন আমাদের প্রকৌশলীরা।’
তিনি জানান, টোলের অর্থ সংরক্ষণের জন্য আলাদা হিসাব খুলতে হবে। এ অর্থ দিয়ে মহাসড়কগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনে মেরামতের কাজে খরচ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এ নিয়ম চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান।
বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে ‘এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ স্থাপন হওয়ার পর গাড়ির ওজন মাপার প্রক্রিয়া কেউ যেন ‘টেম্পারিং’ করতে না পারে, সে জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে মনিটরিংয়ের জন্য একটি সমন্বিত সার্কিট ব্যবস্থা থাকবে। ডিজিটাল সমন্বিত সার্কিট ব্যবস্থা থাকলে ফাঁকির পরিমাণ কমবে।’
২১ মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে কেউ যাতে টেম্পারিং করতে না পারে। এটি সময়ের দাবি। কিন্তু এমন পদ্ধতি বের করতে হবে, যাতে যাত্রী থাকুক আর না থাকুক, এর ওপর দিয়ে গাড়ি গেলেই যেন গাড়ির নাম, নম্বর, ওজনসহ বিস্তারিত তথ্য উঠে যায়। তিনি বলেন, এসব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো একটি জায়গা থেকে মনিটরিং করতে হবে। এ কাজগুলো যেন স্বয়ংক্রিয় হয়। এছাড়া ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানগুলো যাতে নির্দিষ্ট মাপের তুলনায় বেশি বড় না হয়। সব যানবাহনের মাপ একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ডে হতে হবে।
যেসব সড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, সেগুলো হলো: গাজীপুর সদর, কেরানীগঞ্জ, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী, বুড়িচং, ফেনী সদর, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম সদর, সীতাকুণ্ড, নবীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, রামপাল, সাতক্ষীরা সদর, দামুড়হুদা, শিবগঞ্জ, হাকিমপুর, রৌমারী, তেঁতুলিয়া, সৈয়দপুর, শিবচর ও কালিহাতী উপজেলা।
টোলের আওতায় আনা হচ্ছে মহাসড়ক
