নিজস্ব প্রতিবেদক:যার হাতে ভিত্তি, দুই দশক পর তাকেই প্রথম যাত্রী হিসেবে পেল দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
গতকাল শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ফলক উম্মোচন করে দেশের সবচেয়ে বড় এ সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে ৭৫০ টাকা টোল দিয়ে গাড়ি নিয়ে প্রথম যাত্রী হিসেবে তিনি পদ্মা সেতু এলাকায় প্রবেশ করেন।
সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সকালে হেলিকপ্টারে করে মাওয়ায় পৌঁছান। সেতুর সার্ভিস এরিয়ায় সাড়ে তিন হাজার অতিথির উপস্থিতিতে তিনি সুধী সমাবেশে অংশ নেন এবং স্মারক টিকিট ও স্মারক নোট উšে§াচন করেন। এরপর বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে তার গাড়ি সেতুর টোল প্লাজার দিকে এগিয়ে যায়। দুই মিনিট পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর টোল প্লাজায় পৌঁছায়।
গাড়ি থেকে হাত বাড়িয়ে টোলের টাকা দেন প্রধানমন্ত্রী। বহরে থাকা বাকি গাড়িগুলোর টোলও তিনিই পরিশোধ করেছেন বলে জানান টোল প্লাজায় দায়িত্বরত কর্মী তানিয়া আফরিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার নিজের গাড়ি এবং বহরের সব গাড়ি মিলিয়ে মোট ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল দিয়েছেন।
টোল প্লাজায় একজন নারী ইনচার্জকে দায়িত্বে দেখে প্রধানমন্ত্রী খুব খুশি হয়েছেন বলে জানিয়ে তানিয়া বলেন, ‘তিনি আমার নাম জানতে চেয়েছেন, আমার কেমন লাগছে জানতে চেয়েছেন। আমি আমার অনুভূতি ব্যক্ত করেছি; বলেছি, খুব ভালো লেগেছে। প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি দেখতে পেয়ে আমার স্বপ্নও পূরণ হলো।’
টোল দিয়ে বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে পদ্মা সেতুর দিকে এগিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। সেতুতে ওঠার আগে বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে পদ্মা সেতুর ফলক উšে§াচন করেন প্রধানমন্ত্রী। বাতাসে রঙিন আবির উড়িয়ে বর্ণিল পরিবেশে উদ্বোধন করা হয় বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। ফলক উšে§াচনের পর মোনজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন এ সময়।
২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়া যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তখনকার যোগাযোগ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়াও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। প্রসঙ্গত, পরে সেই অভিযোগের কোনো প্রমাণ আর মেলেনি।
উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর সেতুতে ওঠে বেলা ১২টা ৭ মিনিটে। কিছুক্ষণ পর বহরের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রায় ১৫ মিনিট কাটান তিনি।
বিমানবাহিনীর কয়েকটি হেলিকপ্টার সে সময় পতাকা উড়িয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেয় সেতুর ওপরে আকাশে। বিমান থেকে ছড়ানো লাল, সবুজ, নীলসহ নানা রঙের ধোঁয়া। সেতুতে দাঁড়িয়ে মিগ-২৯ জঙ্গি বিমানের একটি প্রদর্শনীও উপভোগ করেন সরকারপ্রধান। উৎসবের এ মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় ধারণ করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও সেতুর ওপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এ সময়।
ধীর গতিতে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু পাড়ি দিয়ে ১২টা ৩৪ মিনিট নাগাদ প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। সেখানে সেতুর আরেকটি ফলক উšে§াচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে।