নিজস্ব প্রতিবেদক:ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে বিস্ফোরণের পর তেলের ট্যাংকারে আগুন না লাগায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বেঁচে গেছি। ট্যাংকারের মধ্যে আগুনটা যায়নি, তার আগেই নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেছে।’
কোরবানির ঈদের ছুটি শেষে গতকাল রোববার প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
ক্ষতিগ্রস্ত তেলবাহী জাহাজটির তেল সরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আজকের (রোববার) মধ্যে তেলগুলো ওখান থেকে সংগ্রহ করা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের উদ্ধারকারী জাহাজ সেখানে গেছে এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে।’
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার সাগর নন্দিনী-২ ট্যাংকারটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর পাড়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানির জন্য জ্বালানি তেল নিয়ে আসে। ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে সেটি নোঙর করা ছিল রাজাপুর গ্রামের কাছে।
কিন্তু শনিবার বেলা ২টা ১০ মিনিটে হঠাৎ বিস্ফোরণের পর জাহাজে আগুন ধরে যায়, এতে পাঁচজন দগ্ধ হন। বিস্ফোরণ ও আগুন ধরার পর থেকে বলা হচ্ছিল, ওই জাহাজে নয়জন ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন দগ্ধ হলেও নিখোঁজ রয়েছেন চারজন। এরই মধ্যে রোববার দুপুরে জাহাজটির ইঞ্জিনরুম থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি থেকে নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছিল, যে কারণে তেল সরিয়ে নেয়ার তোড়জোড়ও শুরু হয়। পদ্মা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, জাহাজটি থেকে এখন পর্যন্ত চার লাখ লিটার তেল সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
সচিবালয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ট্যাংকার দুর্ঘটনায় তেল ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো সংগ্রহ করতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছে। অন্যান্য বন্দরগুলোয়ও এ ধরনের প্রস্তুতি আছে।’
সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে আগুন লাগার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে আমরা বুঝতে পারব কেন সেখানে আগুন ধরে গেল।’
সুগন্ধা নদীতে তেলের ট্যাঙ্কারে আগুন লাগার আগের দিন শুক্রবার ঢাকার সদরঘাটের লালকুঠি ঘাটে ভিড়ে থাকা চাঁদপুর রুটের ‘ময়ূর-৭’ লঞ্চে আগুন লাগে। এ ঘটনায় তিনতলা লঞ্চটির তৃতীয় তলার পুরোটাই পুড়ে যায়। তবে কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ময়ূর-৭ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে কোনো যাত্রী ছিল না। সেখানে যারা স্টাফ ছিল, সেই স্টাফদের রুমে আগুন ধরে যায়। প্রাথমিকভাবে সেখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফায়ার ফাইটাররা খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং কোনো হতাহত হয়নি। তবে লঞ্চ পুরোটাই পুড়ে গেছে।
‘আমাদের পক্ষ থেকে বলতে পারি, এখানে যে ধরনের ক্লাস মেইনটেইন করার কথা একটা লঞ্চ চলাচলের জন্য, সবগুলো সেখানে সার্টিফাইড ছিল।’
আগুন লাগার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিপিংয়ের পক্ষ থেকে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে, তদন্ত রিপোর্ট এলেই আমরা জানতে পারব। এ মুহূর্তে একেবারে সঠিক তথ্যটা দেয়া যাচ্ছে নাÑকীভাবে এই আগুনটা লাগল।’
পরপর দুই দিন দুটি নৌযানে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ তদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে।’ আগামী তিন বছরের মধ্যে আধুনিক নৌপথ করার পাশাপাশি নৌযানের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের নদীমাতৃক এই দেশে নৌপথ আছে, কিন্তু নৌপথের নিরাপত্তার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতিগুলো থাকা দরকার, সে ধরনের প্রস্তুতির ব্যাপক সংকট ছিল ১৫ বছর আগে। গত ১৫ বছরে নৌপথ তৈরি করার জন্য ড্রেজার সংগ্রহ এবং উদ্ধারকারী জাহাজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
‘আমাদের আরও প্রস্তুতি আছে। আমাদের যে ধরনের উদ্ধারকারী জাহাজ আছে, তার থেকে আরও বেশি হেভি জাহাজের জন্য ডিপিপি করেছি, প্ল্যানিং কমিশনে আছে। নৌপথ নিরাপদ রাখার জন্য আমরা ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছি। খুব আধুনিক নৌপথ এবং নিরাপত্তার জন্য সে ধরনের ব্যবস্থা আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যে নিশ্চিত করতে পারব।’