নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভার চামড়াশিল্প নগরীতে ১৩৫টি ট্যানারির কার্যক্রম চালু আছে। এর বাইরে ট্যানারির সংখ্যা নগণ্য। ট্যানারিশিল্পের শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয়া হয় না, প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি নেই, ৬০ শতাংশের আইডি কার্ড নেই, মাত্র দুই থেকে আট শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পায়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহায়তায় ‘টুগেদার ফর ডিসেন্ট লেদার’ প্রোগ্রামের অধীনে চামড়াশিল্প-বিষয়ক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের (বিএলএফ) ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন এবং অ্যাডভোকেসি সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ)। বিএলএফের মহা-সচিব জেডএম কামরুল আনামের সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেয় শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, ট্যানারি মালিকদের দু০টি সংগঠন, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষণা দলের প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ। গবেষণায় উঠে আসে, হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের সময় আশ্বাস দেয়া হলেও এখনও সাভার চামড়াশিল্প নগরীতে শ্রমিকদের জন্য আবাসন, হাসপাতাল, ক্যান্টিন প্রভৃতির ব্যবস্থা হয়নি। সোশাল কমপ্ল্যায়েন্সের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অসন্তোষ আছে। হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরের ফলে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে। গবেষণা ফলাফলের ভিত্তিতে শ্রমিকদের আইডি কার্ড, অফার লেটার, কন্ট্রাক্ট, পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, ট্যানারিশিল্পকে পরিবেশবান্ধব করার উদ্যোগ নেয়া, শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করার সুপারিশ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল ও সুপারিশের ভিত্তিতে চামড়াশিল্প-সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা অ্যাডভোকেসি সভায় অংশ নেন এবং নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন।
ট্যানারি প্রাতিষ্ঠানিক খাত হলেও ৯২ শতাংশ অস্থায়ী শ্রমিক নিয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক একেএম আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিএলএফ সবাইকে নিয়ে চামড়াশিল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার না দিলে শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
২০২৬ সালের পরে ইনসেন্টিভ বন্ধ হয়ে যাবে এবং এরপর কমপ্ল্যায়েন্ট ফ্যাক্টরিগুলোই টিকে থাকবে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের হেড অব প্রজেক্টস অ্যান্ড প্রোগ্রাম রেহানা আক্তার রুমা। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ট্যানারি ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের ক্ষেত্রে নিজেদের কার্যক্রম আরও জোরদার করার অঙ্গীকার করা হয়।
সভার সমাপনী বক্তব্যে ট্যানারি শিল্প ও এর শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যাডভোকেসি সভা আয়োজনের তাগিদ দেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জেডএম কামরুল আনাম।