ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা বেসরকারি খাতে আনতে পলিসি করা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা বেসরকারি খাতে আনার জন্য ইতোমধ্যে আমরা পলিসি তৈরি করছি। আমরা স্মার্ট গ্রিডের দিকে এগোচ্ছি। ডিস্ট্রিবিউশনে স্ক্যাডা সিস্টেম নিয়ে আসছি এবং একে স্মার্ট করার জন্য গ্রাহক পর্যায় থেকে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত কাজ করছি। গতকাল  সোমবার বিদ্যুৎ ভবনে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্সের উদ্যোগে আয়োজিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই আমাদের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এল, তখনই মারাত্মকভাবে কয়লার দাম বেড়ে গেল। যে কয়লার দাম আমরা ঠিক করেছিলাম ৬০ ডলার, তা হয়ে গেল সাড়ে ৪০০ ডলার। গ্যাসের দাম ও তেলের দাম বাড়ল। এ ধাক্কাটি গত এক বছরে মারাত্মক গ্যাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে আর্থিক খাতে। এই ইফেক্টটা কিন্তু আমরা এখন বুঝছি।’

তিনি বলেন, ‘করোনার সময় জ্বালানির দাম পড়ে গেছে, কিন্তু চাহিদা ছিল না। যখন চাহিদা বাড়ল, তখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দামও বাড়ল। কিন্তু প্রাইস তো আমরা মার্কেট বেজড করিনি। এখন আমরা এটাও করি না, মেরিট ওর্ডার অনুযায়ী সাপ্লাই দেব। সেই সিস্টেমেও আমরা যাইনি। কারণ আমরা বড় ধরনের একটি ভর্তুকি দিয়ে আসছি। আমাদের সিস্টেম ছিল কানেক্টিভিটি। যারা লাইফ লাইনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তারা যেন মোটামুটিভাবে ব্যবহারটি বাড়ান। সে কারণে টার্গেট বেজড ভর্তুকি আমাদের চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক সমস্যা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এর প্রভাব খারাপভাবে পড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। আমাদের হাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সব ব্যবস্থা করা আছে। ট্রান্সমিশনও আমাদের খুব খারাপ যে তা নয়। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সে পরিমাণ ট্রান্সমিশন লাইনও আমাদের আছে। পরবর্তী নতুন প্রজেক্টও আমাদের আছে। কিন্তু জ্বালানির ঘাটতি আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বক্তারা বললেন, আগে নিজের দেশের জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক। কিন্তু নিজের দেশের জ্বালানি আমরা কতটা নিশ্চিত করব? বিশেষজ্ঞরা তিন রকম কথা বলছেন, যারা পরিকল্পনা নিচ্ছেন তারা আরেক রকম কথা বলছেন, যারা কাজ করছেন, তারা আবার আরেক রকমভাবে কাজ করছেন। আমি মনে করি, সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হচ্ছে। গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। আমি মনে করি, আরও বড় আকারে পাওয়া যাবে। সেই

 পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও চলছে। কিন্তু সেটাও অর্থের ব্যাপার। একটি গ্যাস ক্ষেত্র ড্রিলিং করতে গেলে ৯ থেকে ২১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয়। ১০টি গ্যাস ক্ষেত্র ড্রিলিং করতে গেলে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতো লেগে যায় যায়। তাই ডলার জোগান দিতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কন্ট্রাক্টররা আসতে চায় না। সব মিলিয়ে সবকিছু বড় চ্যালেঞ্জর মুখে আছে।’

তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, সেটি করতে বিদ্যুৎ ও এনার্জি ক্ষেত্রে প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো বিনিয়োগ লাগবে। এটি আসবে কোথা থেকে? এটা আসবে উন্নয়ন অংশীদর, সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। এজন্য বেসরকারি খাতকে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা বেজডলোড প্লান্ট বেসরকারি খাতকে ২০১০ সালে দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আসেনি। কারণ তারা প্রস্তুত ছিল না। আমাদের তখন বাধ্য হয়ে তেলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখতে হয়েছে। এখন যেসব তেলে প্লান্টগুলো চলমান, সেগুলো নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট নীতিতে চলছে। কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ নেই। যদি একটি প্লান্টে ফুয়েল শর্ট হয়, আমরা অন্য প্লান্ট দিয়ে চালাব। আমরা এখন সম্পূর্ণভাবে গ্যাস ব্যবহার করছি। বিদেশ থেকে যদি এখন বেশি গ্যাস আনাও হয়, সেটি সংরক্ষণ করার মতো অবকাঠামো আমাদের নেই। এখন আমরা গ্যাস নিয়ে কাতারের সঙ্গে যে কন্ট্রাক্ট করতে যাচ্ছি, সেটা ২০২৬-২৭ সালের পর থেকে আসা শুরু হবে।’

বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সোলারের রেগুলার এনার্জির ক্ষেত্রে ট্যাক্সের ব্যাপারটা দেখা দরকার। ইউনিফাইড ট্যাক্সের ব্যাপারে আমরা ইতোমধ্যে এনবিআরের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা মনে করছি সামনে যেহেতু ট্যাক্স আরও বেশি আসবে, তাই একে কমিয়ে আনা প্রয়োজন। তেল ও কয়লার দামের সমন্বয় করা দরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলোর দাম কমেছে। এসব বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে অ্যাপ্রোচ করেছি। আগামী বাজেটে যাতে ট্যাক্সের নতুন প্রাইসিংয়ের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেই আশায় আছি আমরা।’

ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্সের মহাসচিব রিশান নাসরুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ, বিপ্পার সভাপতি ফয়সাল করিম খান ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০