শেয়ার বিজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে শুল্কারোপ করতে যাচ্ছেন। তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য অংশীদাররা তীব্র সমালোচনা করছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) এতে যোগ দিয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, শুল্কারোপ করলে অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খবর বিবিসি।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এক টুইটে ইস্পাতে ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়ামে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের পরিকল্পনার কথা জানান। আগামী সপ্তাহে এটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। ট্রাম্পের টুইটের পরই বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। কানাডা, ব্রাজিল, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, চীন ও অস্ট্রেলিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প শুল্কারোপ করলে তারাও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের পরিকল্পনা করছে। দেশটি থেকে ইইউ সদস্য দেশগুলো সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবার্তো জেভেদো বলেন, ‘বাণিজ্য-যুদ্ধ কারো জন্যই ভালো কিছু আনবে না।’
তবে ট্রাম্প এ সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করে বাণিজ্য-যুদ্ধকে ভালো বলেছেন। তিনি আরেক টুইটে বলেছেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শত শত কোটি ডলার হারাচ্ছে, এ মুহূর্তে এসে বাণিজ্য-যুদ্ধ ভালো এবং আমরা খুব সহজেই জিতব।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যখন আমরা কোনো দেশের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য করি, তখন তারা সে সুযোগ নেয়। আর বাণিজ্য নয়Ñআমরা বড় জয় পাব। এটি খুবই সহজ।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই নতুন এ শুল্কারোপের নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এতে মার্কিন কর্মসংস্থানের সুরক্ষা হারাবে এবং এসব পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে, যার ফল ভোগ করতে হবে ভোক্তাদের।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত ছড়িয়ে পড়ার পর বাণিজ্য-যুদ্ধের শঙ্কায় এশিয়ার পুঁজিবাজারে পতন দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ ইস্পাত রফতানি করে, তার চারগুণ বিশ্বের প্রায় ১০০ দেশ থেকে আমদানি করে। দেশটির জ্বালানি বিভাগ বলছে, ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দার পর ইস্পাত শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে এটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম গতিতে এগুচ্ছে। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১১২ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। ২০১৬ সালে এসে তা ৮৬ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ২০০০ সালে এ খাতে দেশটিতে এক লাখ ৩৫ হাজার কর্মী কাজ করত। ২০১৬ সালে এসে তা ৮৩ হাজার ৬০০-এ চলে এসেছে।
গত বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৬২ সালের আইনের আওতায় এ শিল্পের সুরক্ষায় বাণিজ্য বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দেন। গত মাসে বাণিজ্য বিভাগ ওই তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছে। এতে শুল্কারোপের সুপারিশ করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই ট্রাম্প টুইটে তার পরিকল্পনার ঘোষণা দিলেন।