শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থা (থিংক ট্যাঙ্ক) ‘সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসেস’ (সিএপি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কর হ্রাস সংস্কার নীতি পাসের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার জামাতাসহ আরও পাঁচজন প্রশাসনের নিকটস্থ লোক হাজার হাজার ডলার রক্ষা করতে চাইছেন। তারা জানায়, এর মাধ্যমে ট্রাম্প নিজেই বছরে ১৫ মিলিয়ন ডলার রক্ষা করবেন, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাওয়ার কথা। প্রতিষ্ঠানটি ট্রাম্পের বিতর্কিত এ ট্যাক্স সংস্কার বিলকে একধরনের দুর্নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করছে। খবর গার্ডিয়ান, এএফপি।
বুধবার সিনেটে কর সংস্কার বিল পাস হওয়ার এক দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ওই থিংক ট্যাঙ্ক গ্রুপটি জানায়, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা বছর শেষ হওয়ার আগেই তাড়াহুড়া করে এ বিলটি পাস করতে চাইছেন, যা তাদের সম্পত্তি রক্ষাই বোঝায়।
ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএপি ট্রাম্পের সম্পদ রক্ষার বিস্তারিত হিসাবও ব্যাখ্যা করে বলে, বছরে ১১ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার (সেইভ) রক্ষা পাবে ট্রাম্পের সম্পত্তি। এ তালিকায় আরও রয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস, শিক্ষামন্ত্রী বেটসি ডিভোস, অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও। এদের প্রত্যেকেরই অন্তত সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার বছরে রক্ষা পাবে কর সংস্কারের ফলে। যেখানে ট্রাম্পের জামাতা ও তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জেরার্ড কুশনারের বছরে ১২ মিলিয়ন ডলার রক্ষা পাবে।
বর্তমান আইনে দাম্পতির সম্পত্তি ১১ দশমিক দুই মিলয়ন হলে ৪০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়, কিন্তু ট্রাম্পের নতুন কর আইনে তা দ্বিগুণ করে ২২ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। ফলে ধনিকশ্রেণি আরও ধনীই হবে।
থিংক ট্যাঙ্কের জ্যেষ্ঠ ফেলো শেথ হ্যালন বলেন, আমি মনে করি আমেরিকান জনগণ কর সংস্কার বিলকে গ্রহণ করবে না। বরং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করবে। কারণ কর সংস্কার নীতির ফলে মধ্যবিত্তের কোনো উপকার আসবে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করপোরেট ‘ট্যাক্স হ্রাস’ বিল সিনেটে পাস হওয়ার পর দেশটির বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের বেতন-বোনাস বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বুধবার সিনেটে কর হ্রাস বিলটি পাসের এক দিন পর বৃহস্পতিবার কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের এসব বোনাস ঘোষণা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকম জায়ান্ট ‘এটি অ্যান্ড টি’ তাদের প্রায় দুই লাখেরও বেশি কর্মীকে সর্বোচ্চ এক হাজার ডলার পর্যন্ত বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া তারা ২০১৮ সালে নতুন করে আরও এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রান্ডাল স্টিফেনসন নতুন এ ট্যাক্স প্ল্যানকে ‘মনস্তাত্ত্বিক পদক্ষেপ’ বলেছেন। তিনি বলেন, এ ট্যাক্স সংস্কার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে এবং কর্মীদের ‘ভালো’ বেতন দেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ইন্ডাস্ট্রিতে মার্কিনিদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও মার্কিন কর্মীদের বেতন-বোনাস বাড়ানো যাবে। ২০১৬ সালে ৩৩ শতাংশ হারে সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার কর দিতে হয়েছে এটি অ্যান্ড টি কোম্পানিকে, যা এবার কমে ২১ শতাংশে নেমে এসছে। যা কর্মচারীদের উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে।
ডেমোক্রেটিক সমালোচকরা বলছেন, এ কর কমানোর বিল পাস হওয়ায় ধনী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আরও ধনী হবে। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের যুক্তি হলো, এতে মার্কিন অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। অন্যদিকে কর কমার সিদ্ধান্তের পর স্বনামধন্য উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘বোয়িং’ তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং ‘ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র’ প্রস্তুতকরণে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে বুধবার ট্রাম্পের কর সংস্কার বিলটি সিনেটে ৫১-৪৮ ভোটে পাস হয়। বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভিত্তিগত কর সংস্কার নীতি হতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের বহুল কাক্সিক্ষত কর পরিকল্পনায় মূলত করপোরেশনগুলোর জন্য বড় কর্তনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেখানে ট্রাম্প নিজেও উপকৃত হবেন। বর্তমান করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।