শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল এখনও পর্যন্ত মেনে নেননি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আইনি পথেই এর ফায়সালা হবে। তবে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্পের আইনি ব্যবস্থার হুমকিতে কিছুই থেমে থাকবে না। খবর: বিবিসি, রয়টার্স।
ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিভিন্ন রাজ্যে ট্রাম্প শিবিরের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন বলেন, কোনো কিছুই ক্ষমতা হস্তান্তরকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। যাই ঘটুক না কেন, ২০ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে; সে ব্যাপারে এরই মধ্যে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের নির্বাচনের ফল মেনে না নেওয়া ‘বিব্রতকর’ বলেও মন্তব্য করে তিনি।
এদিকে রয়টার্স/ইসপোস পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুললেও যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মানুষ এটি বিশ্বাস করে না। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৮০ শতাংশই বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছে। এই ৮০ শতাংশের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক।
আগামী ২০ জানুয়ারি সম্ভাব্য শপথ গ্রহণের পর নিজ প্রশাসনের অগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে এ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাইডেন। অন্যদিকে বাইডেনের এ ঘোষিত বিজয়কে উল্টে দিতে বড় ধরনের কোনো প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলছেন ট্রাম্প। ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনায় অনিয়মের অভিযোগ এনে এরই মধ্যে ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে ডজনখানেক মামলা করা হয়েছে।
বাইডেন সবার আগে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার ওপর জোর দিচ্ছেন। এ ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে দুই লাখ ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাইডেন বলছেন, এ বছর ২৬ নভেম্বর থ্যাংকস গিভিং ডে’র ছুটির আগেই তিনি গোটা দুয়েক গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়ন দেবেন।
এদিকে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে বাইডেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো সহযোগিতা করছে না ট্রাম্প প্রশাসন। এখন পর্যন্ত বাইডেনের বিজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
নিয়ম অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার কথা। এর আগেই বিদায়ী ও আসন্ন প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি সেরে নিতে হয়। তবে ট্রাম্প এখনও হার মেনে না নেওয়ায় সেই সমন্বয়ের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। সোমবার বাইডেন শিবির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন তারা।
বিদায়ী ও আসন্ন প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি করে থাকে জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ)। তারাই পুরোনো প্রশাসনের কাছ থেকে নতুন প্রশাসনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটি করে থাকে। এখন এই জিএসএ’র বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাইডেন শিবির।
এদিকে, নির্বাচনে নিজের পরাজয় স্বীকার না করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জো বাইডেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কোনো কিছুই ক্ষমতা হস্তান্তরকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। ট্রাম্প ইতোমধ্যে টুইট করে বলেছেন, শেষ পর্যন্ত তিনিই জয় পাবেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন, এ বিষয়ে তিনি কী ভাবছেন, মঙ্গলবার ডেলওয়ারের উইলমিংটনে একজন সাংবাদিক বাইডেনকে এ প্রশ্ন করেন। উত্তর বাইডেন বলেন, “খোলাখুলি বললে, এটিকে আমি ‘বিব্রতকর’ বলে মনে করি। এটি প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকারকে সাহায্য করবে না। ২০ জানুয়ারি এসব শেষ হবে।”
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রাজ্য পর্যায়ের ফল সরকারিভাবে ঘোষিত হয়নি, বেশ কয়েকটি জায়গায় ভোট গণনা এখনও চলছে। এই রাজ্যগুলোর ফল নির্ধারিত হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল কলেজের বৈঠকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষিত হবে।