বীর সাহাবী: ট্রাস্ট বা আস্থা শব্দ ব্যবহার করে অন্য কোম্পানিকে সেনাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আর্থিক লেনদেন করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।
অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস জোগাতে কিছু অসাধু চক্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর দিয়েছে। তারা সেনাবাহিনীর ট্রাস্ট বা আস্থা নাম ব্যবহার করে সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এতে লাখ লাখ বিমাকারী গ্রাহক প্রতারণার শিকার হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করে আসছে চক্রগুলো।
সম্প্রতি এমনই একটি অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছে বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। চিঠিটি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) আরও সাত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট বলেছে, বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অধীনে একমাত্র জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান ‘আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ বিমা ব্যবসায় রয়েছে; যা ইতোমধ্যে নতুন ধারার জীবন বীমা সেবার অঙ্গীকার নিয়ে সর্বোচ্চ আস্থা, নিয়মানুবর্তিতা, স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ অনেক সুনাম অর্জন করেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, কিছু অসাধু চক্র প্রতিষ্ঠানটির নামের অংশবিশেষ ‘ট্রাস্ট’ বা বাংলায় ‘আস্থা’ শব্দটি তাদের কোম্পানির নামের অংশবিশেষ হিসেবে যুক্ত করে ব্যবহার করছে। ফলে কোম্পানিকে সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বলে পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে নিজেদের ফায়দা তোলার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
আর্মি ওয়েলফেয়ার বলেছে, বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক গত ২ মে ২০১১ সালে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে ‘ট্রাস্ট’ শব্দটির ট্রেডমার্কস নিবন্ধন করা হয়, যার নং ১৪২৪২৩। কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে ট্রাস্ট শব্দ ব্যবহারকারী কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোং লিমিটেড পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। সুতরাং বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও আস্থা লাইফের সুনাম অক্ষুণœ রাখার লক্ষ্যে যেসব বিমা কোম্পানি নামের অংশবিশেষে বা তাদের সেøাগানে ট্রাস্ট বা ‘আস্থা’ শব্দটি ব্যবহার করছে, তা দ্রুত অপসারণ করার বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার সূত্রে জানা গেছে, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোং লিমিটেড নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। যদি কেউ ট্রাস্ট নাম যুক্ত করে কোনো প্রতিষ্ঠান খুলে থাকে তাহলে এটা স্পষ্টতই প্রতারণা। ট্রাস্ট বা আস্থা নাম ব্যবহার করে এহেন কর্মকাণ্ড যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এবং ওইসব প্রতিষ্ঠান দ্বারা কেউ প্রতারিত হলে তার দ্বায়ভার বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট বহন করবে না।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) মুখপাত্র ও পরিচালক (উপসচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এমন একটি চিঠি আইডিআরএতে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ট্রেডমার্ক হচ্ছে একটি স্বতন্ত্র ইঙ্গিত; যা একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির পণ্য বা পরিষেবাগুলোকে বাজারে অন্যদের থেকে আলাদা করতে ব্যবহার করা হয়। ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯-এর ধারা ২-এর ৮-এ বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক অথবা কোনো পণ্যের বা সেবার সহিত ব্যবহƒত এমন কোনো মার্ক যাহাতে ব্যবসায় উক্ত পণ্যের ওপর মার্ক ব্যবহারকারী স্বত্বাধিকারীর অধিকার রহিয়াছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। কোনো সেবা বা পণ্যের
সহিত ব্যবহৃত বা ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত এমন কোনো মার্ক যাহার স্বত্বাধিকারী বা নিবন্ধিত ব্যবহারকারী হিসেবে ব্যবহারের অধিকার রহিয়াছে বলিয়া প্রতীয়মান হয়। ট্রেডমার্ক আইনের ৯৬ ধারার অধীনে কোনো নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের লঙ্ঘন, নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক সংশ্লিষ্ট কোনো অধিকার, নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সংশোধিত কোনো অধিকার এবং সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো ট্রেডমার্ক বা প্রতারণামূলকভাবে কোনো ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত হয়েছে বা হয়নি চালানো হলে যে কোনো স্বত্বাধিকারী অবশ্যই জেলা জজ আদালতে মামলা এবং অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এই ধারায় নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত যে কোনো ট্রেডমার্ক নিয়ম-কানুন লঙ্ঘনে উপযুক্ত সাজা, জরিমানা এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে।