ট্রিপ পাচ্ছে না অর্ধেকের বেশি লাইটারেজ জাহাজ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে সমুদ্র ও নৌপথে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনে ব্যবহƒত হয় প্রায় দুই হাজার লাইটারেজ জাহাজ। এসব জাহাজে ডাল, গম, চিনি, চাল, ছোলা, সার, সিমেন্টের ক্লিংকারসহ ভোগ্য ও শিল্পপণ্য পরিবহন করা হয়। কিন্তু গত ১৪ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের অপেক্ষায় সিরিয়ালে জাহাজ ছিল ৮৩২টি। অপরদিকে পণ্য পরিবহনের বরাদ্দ পায় মাত্র ৩৭৯টি জাহাজ। অর্থাৎ কাজ না পেয়ে ৪৫৩টি জাহাজ অলস বসেছিল, যা মোট পণ্য পরিবহনে উপযোগী জাহাজের ৫৪ শতাংশের বেশি।

ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল ও জাহাজ মালিকদের সূত্রমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গম, ভুট্টা, ডাল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, কয়লা, স্টোনসহ রকমারি পণ্য নিয়ে আসা চট্টগ্রাম বন্দরে বড় মাদার ভেসেলগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। এসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে। বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভেসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে দেশের বিভন্ন অঞ্চলে সরবরাহ দেয়া হয়। মূলত দেশের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে লাইটার জাহাজ। কিন্তু দেশে আমদানি কমে আসায় অর্ধেকের বেশি লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে থাকছে। এ কারণে খাতটিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

লাইটার জাহাজ ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানি কমে যাওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে এ খাতে সংকট চলছে। জাহাজগুলো প্রয়োজনীয় ভাড়া পাচ্ছিল না। গড়ে দুই মাসে এক ট্রিপ ভাড়া না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক জাহাজ অলস বসে থাকে। এ কারণে নাবিকদের বেতন-ভাতা জোগানোর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদ মেটাতে নাজুক অবস্থায় পড়েন অনেক জাহাজ মালিক। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে মালিকরা স্ক্র্যাব ইয়ার্ডে জাহাজ বিক্রি করে লোকসান কমাচ্ছেন। পাশাপাশি স্ক্র্যাপ লোহার দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটার জাহাজ কেটে ফেলার হিড়িক পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও পণ্য পরিবহনের জাহাজ পাওয়া যাবে না। এতে পণ্য পরিবহনে সংকটে দেখা দেবে।

লাইটার জাহাজ ব্যবসায়ী আবদুর রহিম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটের কারণে দেশে আমদানির পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। ফলে কার্গো সংকটে থাকায় অর্ধেকের চেয়ে বেশি জাহাজ দেশের বিভিন্ন স্থানে অলস বসে থাকছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা রীতিমতো জাহাজ মালিকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে ডলার সংকটে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন শিল্পপণ্য আমদানি কমেছে। ভারত থেকে সড়কপথে পণ্য আমদানি বেড়েছে। ফলে নদীপথে পণ্য পরিবহন প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কমেছে, যা চলতি বছরের শুরু থেকে আমরা লক্ষ্য করছি। এতে আমাদের এখন ৫০ শতাংশের বেশি লাইটার জাহাজ অলস বসে আছে। অনেক জাহাজ মালিক লোকসান কমাতে জাহাজ স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করছেন। এতে এ খাতে আবার সংকট দেখা দেবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০