আতাউর রহমান: দেশের বিনিয়োগকারীদের ফিক্সড ইনকাম খাতে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে সাত বছর ধরে ট্রেজারি বন্ড বাজারে কার্যকরভাবে চালুর চেষ্টা করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এ নিয়ে দফায় দফায় বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল লেনদেন ও স্ট্যাম্প ফি। ডিএসই লেনদেন ফি নামমাত্র মূল্যে নামিয়ে আনলেও স্ট্যাম্প ফি কমিয়ে আনতে সময় লাগে। গত সাত বছর ধরে চেষ্টার পর গত বছরের ১৪ অক্টোবর ডিএসইতে ও ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রাথমিকভাবে প্রথম লেনদেন চালু হয়। এরপর সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রায় ১৭ বছর পর আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের পুঁজিবাজারে পরিপূর্ণভাবে লেনদেন শুরু (গো লাইভ) হতে যাচ্ছে তালিকাভুক্ত ২২২টি ট্রেজারি বন্ড বা সরকারি সিকিউরিটিজের।
তাই স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং প্লাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন চালু করার জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আগামী ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা নির্ধারণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়া চিঠিতে ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপসচিব মো. রুহুল আমিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিএসই, সিএসই, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)-সহ সবাইকে জানানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন চালুকরণের নিমিত্ত কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে গত ১৭ আগস্ট একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি উপস্থাপন করেন। সে মোতাবেক উল্লিখিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে সিস্টেম বেজড মক ট্রেডিং (রেগুলার ও স্পট ট্রেডিং ভিত্তিতে) ২৫ আগস্টের মধ্যে সম্পন্নকরণ, মক ট্রেডিংয়ের সফল সম্পাদন বা সমাপ্তির পর ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিস্টেমের প্রোডাকশন নিশ্চিতকরণ ও ৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন চালুকরণ বা গো-লাইভের তারিখ ও সময় নির্ধারণ।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএল তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্লাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন চালুকরণ তথা গো-লাইভে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ ঘটিকায় নির্ধারণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।’
এদিকে স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালুর বিষয়ে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন করবে ডিএসই। সেই সঙ্গে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেজারে বন্ডের লেনদেন শুরু করার কথাও রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ফিক্সড ইনকাম খাতে বিনিয়োগের অংশ হিসেবে ডেবট সিকিউরিটিজ বা সরকারি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত করে সেগুলো লেনদেন চালু করা হচ্ছে। এতে যারা সেকেন্ডারি মার্কেটের শেয়ারের পাশাপাশি ডেবট সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে সেই বিনিয়োগকারীদের রিস্ক অনেকটা কমে যাবে এবং যারা রিস্ক ফ্রি বিনিয়োগ করতে চায় তারা সুযোগ পাবে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারের লেনদেন ও বাজার মূলধন যেমন বাড়াবে, তেমনি জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদানও অনেক বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।
এরই অংশ হিসেবে ৪ সেপ্টেম্বর ট্রেজারি বন্ড লেনদেনের বিষয়ে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠানো হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জ ও সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান মজুমদার নিশ্চিত করে বলেন, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরুর বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
এর আগে ডিএসই ও সিএসই ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ (ট্রেজারি বন্ড) লেনদেন চালু করার আগে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সভা করার নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ডিএসই এবং সিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ (ট্রেজারি বন্ড) লেনদেন বিষয়ক বিএসইসি কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সভা আয়োজনের জন্য নির্দেশ করা হলো। এর আগে ট্রেজারি বন্ড লেনদেনের বিষয়ে বিএসইসি একটি প্রস্তাবিত খসড়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) তৈরি করে। ওই সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করার আগে বিএসইসিকে এ সংক্রান্ত একটি সভা করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১৭ বছর পর পরিপূর্ণভাবে সরকারি (ট্রেজারি) বন্ডের লেনদেন শুরু হতে যাচ্ছে। এর আগে গত বছরের ১৪ অক্টোবর ডিএসইতে একটি ট্রেজারি বন্ডের (সরকারি সিকিউরিটিজ) পরীক্ষামূলকভাবে লেনদেন হয়। ‘এ’ ক্যাটেগরিতে ডিএসই’র ডেবট বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারি বন্ডটি লেনদেন করে। ট্রেজারি বন্ডটির নাম- ‘১০ণ ইঞেই ২০/০১/২০২৬’। বন্ডটির টেডিং কোড- ‘ঞ১০ণ০১২৬’। আর স্ক্রিপ্ট কোড- ৮৮২৪০। অপরদিকে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সিএসইতে ট্রেজারি বন্ডের পরীক্ষামূলকভাবে লেনদেন শুরু হয়। ‘এ’ ক্যাটেগরিতে সিএসই’র ডেবট বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪টি ট্রেজারি বন্ড পরীক্ষামূলক লেনদেন হয়।
১৬ বছর আগে ২০০৫ সালে ট্রেজারি বন্ডের সেকেন্ডারি বাজারের কার্যক্রম উদ্বোধনের দিন একটি লেনদেন হয়েছিল। এরপর ৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদি ২২২টি বন্ড তালিকাভুক্ত হলেও কখনও এ বাজারে এসব বন্ডের লেনদেন হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ট্রেজারি বন্ডের সেকেন্ডারি লেনদেন চালু ছিল।