বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

ট্রেজারি বন্ড-বিলে মুনাফা বেড়ে দেড়গুণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের (টি-বন্ড) কাট-অফ ইয়েল্ড বা জুন শেষে মুনাফার হার ছিল সাত দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে এই সিকিউরিটিজের কাট-অফ ইয়েল্ড ছিল চার দশমিক ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে বিনিয়োগে মুনাফার হার ৫১ শতাংশ বেড়েছে।  একইভাবে পাঁচ বছর মেয়াদি টি-বন্ডের কাট-অফ ইয়েল্ড বেড়ে আট দশমিক ১০ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি টি-বন্ডের কাট-অফ ইয়েল্ড বেড়ে আট দশমিক ৪৪ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি টি-বন্ডের কাট-অফ ইয়েল্ড বেড়ে আট দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ২০ বছর মেয়াদি টি-বন্ডের কাট-অফ ইয়েল্ড বেড়ে ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়েছে।

আলোচিত অর্থবছরে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের (টি-বিল) কাট-অফ ইয়েল্ড ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেড়ে সাত দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে ১৮২ দিন মেয়াদি টি-বিলের কাট-অফ ইয়েল্ড বেড়ে হয়েছে সাত দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি টি-বিলের কাট-অফ ইয়েল্ড বেড়ে হয়েছে সাত দশমিক ৩৯ শতাংশ।

জানা গেছে, এক বছরের কম মেয়াদের সরকারি সিকিউরিটিজ ট্রেজারি বিল এবং এক বছরের বেশি মেয়াদের সিকিউরিটিজ ট্রেজারি বন্ড নামে পরিচিত। এই সিকিউরিটিজগুলো লেনদেনযোগ্য।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে টি-বন্ড ও বিল ইস্যুও ঢের বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে টি-বন্ডের নিট ইস্যু ছিল ছয় হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে টি-বন্ডের নিট ইস্যু তিন গুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ১৯ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। 

একইভাবে টি-বিলের নিট ইস্যু ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৭ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে টি-বন্ড ও বিলের স্থিতি দাঁড়ায় এক লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে টি-বন্ডের স্থিতি ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা এবং টি-বিলের স্থিতি ছিল ৪৪ হাজার ৭৬ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই বছর মেয়াদি টি-বন্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বেড়েছে।  ২০১৮ সালের জুনে দুই বছর মেয়াদি টি-বন্ডের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র সাত শতাংশ। ২০১৯ সালের জুন শেষে দুই বছর মেয়াদি টি-বন্ডের অংশগ্রহণ বেড়ে হয়েছে ১০ শতাংশ।

আলোচিত সময়ে টি-বিলের ক্ষেত্রে দেখা যায় ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের অংশগ্রহণ ২৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়েছে। 

সরকারি সিকিউরিটিজের সবচেয়ে বড় গ্রাহক ব্যাংক। বিদায়ী অর্থবছরে সরকারি সিকিউরিটিজে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ ছিল ব্যাংকগুলোর [৪১ শতাংশ প্রাইমারি ডিলার (পিডি) ব্যাংকগুলোর এবং ২৯ শতাংশ নন-পিডি ব্যাংকগুলোর]। সরকারি সিকিউরিটিজে বিমা ও ভবিষ্য তহবিলের বিনিয়োগ প্রায় ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ রয়েছে ১৪ শতাংশ। করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, বিদেশি বিনিয়োগকারী, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে এক শতাংশের মতো সরকারি সিকিউরিটিজ।

সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেনের সুবিধার্থে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করে। ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) এবং ট্রেড ওয়ার্ক স্টেশন (টিডাব্লিউএস)Ñদুই ধরনের লেনদেনই অটোমেশনে চলে এসেছে। এছাড়া অর্ডার ম্যাচিং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মও রয়েছে। 

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওটিসি লেনদেন বেড়েছে এবং টিডাব্লিইএস লেনদেন কমেছে। আলোচিত অর্থবছরে টি-বন্ড ও বিল ওটিসি লেনদেন হয়েছে ১৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ১২ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া টিডাব্লিইএস লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে টিডাব্লিইএস লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা।

লেনদেন-অযোগ্য সিকিউরিটিজের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয়ী বন্ড। সঞ্চয়বন্ডের মধ্যে রয়েছে, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ওয়েজ আর্নাস ডেভেলপমেন্ট বন্ড। এছাড়া বিশেষ উদ্দেশ্যে চালু করা এক ধরনের ট্রেজারি বন্ড রয়েছে, যা লেনদেন করা যায় না।

মূলত বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা বন্ড লেনদেনের সুযোগ থাকলে ওটিসি বা টিডাব্লিউএসে মেয়াদ শেষের আগেও বিক্রি করে অর্থ তুলে নেওয়া যায়। অনিবাসী বাংলাদেশিদের বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লক-ইন পিরিয়ড তুলে দেওয়ায় অনেকেই এখন প্রয়োজনে বন্ড বিক্রি করতে পারছেন।

তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, আগের দুই অর্থবছরে এককভাবে সরকারি সিকিউরিটিজের সবচেয়ে গ্রাহক ছিল ব্র্যাক ব্যাংক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্র্যাক ব্যাংককে পেছনে ফেলে সরকারি সিকিউরিটিজের শীর্ষ গ্রাহকের অবস্থানে উঠে এসেছে জনতা ব্যাংক। প্রায় ১২ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজ রয়েছে এই ব্যাংকটির হাতে। প্রায় ১০ শতাংশ সিকিউরিটিজ রয়েছে যমুনা ব্যাংকের হাতে এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ১৫ শতাংশ সিকিউরিটিজ হাতে থাকা ব্র্যাক ব্যাংক গত অর্থবছরে মাত্র ৯ শতাংশ সিকিউরিটিজ নিয়ে সদস্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে।

সরকারি দায় ব্যবস্থপনা কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি ট্রেজারি হাতিয়ার ইস্যুর দায়িত্ব পালন করছে। ২০১৭ সাল থেকে এ বিষয়ে নিয়মিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে ওই বিভাগ। এবারের প্রতিবেদন তৈরির সম্পাদনা পরিষদে ছিলেন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. খুরশিদ আলম, উপমহাব্যবস্থাপক রূপ রতন পাইন, যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও মো. হাবিবুর রহমান, উপপরিচালক কেএম সায়মন ইসলাম ও মো. কামরুল হাসান।

জানতে চাইলে মো. খুরশিদ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এবারের প্রতিবেদনটিতে সরকারি সিকিউরিটিজ নিয়ে বিষদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সরকারি সিকিউরিটিজের পরিধি ও গতিধারা নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এতে সরকার, বিনিয়োগকারী সবাই প্রতিবেদনটি থেকে উপকৃত হবে বলে আশা করছি।’

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০