Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:10 am

ট্রেনচালকদের অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার বন্ধের সুপারিশ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে রেলওয়ের দুই ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার) ও এক গার্ডের (পরিচালক) অবহেলায়। দায়িত্ব পালনে অমনোযোগী হওয়ার কারণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের এক কমিটি তদন্তে এই তিন রেলকর্মীর অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে। ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে দায়িত্ব পালনের সময় চালক ও গার্ডদের স্মার্ট বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মত দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।

রেলের উচ্চপর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি সম্প্রতি রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম।

তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি রেলের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৩ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টায় ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থল ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় মালবাহী ট্রেনের চালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী চালক আতিকুর রহমান ও পরিচালক (গার্ড) মো. আলমগীরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। নিহত এক ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এই তিনজনকে আসামি করে রেলওয়ে থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও।

এই দুর্ঘটনায় মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি, রেলওয়ে দুটি, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসন একটি করে কমিটি গঠন করে।

ভৈরবের ঘটনা ছাড়া গত চার বছরে রেলকর্মীদের গাফিলতিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ, চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর ঝাউতলা ও মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান মোট ৩২ জন। মূলত দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলের অভাব এবং ট্রেন চালানোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে চলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রেলওয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য কার কী দায়, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য মালবাহী ট্রেনের লোকোমাস্টার মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) মো. আতিকুর রহমান ও গার্ড মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লোকোমাস্টার মো. জাহাঙ্গীর আলম যদি সিগন্যাল বা সংকেত যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন এবং এই অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে ট্রেনের গতিনিয়ন্ত্রণ করতেন, তাহলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেত।

সহকারী লোকোমাস্টার মো. আতিকুর রহমান যদি সতর্কতার সঙ্গে সংকেত পর্যবেক্ষণ করে লোকোমাস্টারকে অবহিত করতেন, তাহলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। আর গার্ড মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনও সিগন্যাল বা সংকেত ভালোভাবে লক্ষ করেননি। তিনি যদি সংকেতগুলো লক্ষ করে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করতে পারতেন।

ট্রেন চালানোর সঙ্গে তিনজনই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করায় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে আটটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হচ্ছে দায়িত্ব পালনের সময় ট্রেনচালক ও গার্ডদের স্মার্ট বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা। ট্রেনের লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারের সঙ্গে গার্ডের কথোপকথনের জন্য ওয়াকিটকি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর ট্রেন অনুযায়ী কর্তব্যরত লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ডের নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিশেষ ধরনের টেলিফোন সরবরাহ করা যেতে পারে।

কমিটির অন্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, ট্রেন চলাচলের নিয়ম নিবিড়ভাবে মেনে চলতে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল কর্মীদের সতর্ক করার পাশাপাশি কোর্স করাতে হবে। জনবলসংকটের কারণে ট্রেনে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরতিহীনভাবে কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য জনবলসংকট দূর করতে হবে। সব ধরনের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেনগুলোয় সংঘর্ষ প্রতিরোধী ডিভাইস স্থাপন করতে হবে।