Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 10:11 pm

ট্রেনযাত্রা হোক নিরাপদ

যাত্রী নিরাপত্তা, সাশ্রয়ী পরিবহন, যাত্রীপ্রতি পরিবেশদূষণ অত্যন্ত কম হওয়াসহ নানা কারণে পৃথিবীজুড়েই গণপরিবহন হিসেবে ট্রেনের কদর বাড়ছে। দৈনন্দিন কাজের জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ মাধ্যম ট্রেন। সড়কপথে দূরদূরান্তে যাতায়াতের গণপরিবহন হিসেবে যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে রয়েছে ট্রেন। বাংলাদেশেও যোগাযোগব্যবস্থায় রেলপথের অবদান ক্রমেই বাড়ছে। স্বল্প সময়ে এবং অল্প খরচে অনেক দূরের গন্তব্যে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করা যায়। রেলপথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মনোরম বাতাস জুড়িয়ে দেয় মন-প্রাণ। সড়ক পরিবহনের অতিরিক্ত দুর্ঘটনা ও জ্যামজটের সমস্যা থাকলেও ট্রেনে নেই এ রকম কোনো সমস্য। কিন্তু সাম্প্র্রতিক সময়ে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের আগুনের দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো স্থানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। চলন্ত ট্রেনে ‘পাথর নিক্ষেপ’ যাত্রীদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরে হতাহত হচ্ছেন গার্ড, চালক ও যাত্রীরা। অনেক সময় ছোট বাচ্চারা খেলার ছলে অনেক সময় চলন্ত ট্রেনে পাথর, ঢিল ইত্যাদি নিক্ষেপ করে থাকে। তাদের এই শখের খেলার কারণে প্রায়ই ঘটছে অনেক বড় দুর্ঘটনা। তাদের বিভ্রান্ত বিকৃত আনন্দ রেলযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে। যার কারণে নিরাপদ বাহনকে অনিরাপদ করে তুলছে। পরিণতিতে ট্রেনের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানুষের জীবনও বিপন্ন হচ্ছে। পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, ট্রেনের যাত্রী আহত ও নিহতের ঘটনা ছাড়াও পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব দুর্ঘটনায় রক্তক্ষরণ, চোখে ও মাথায় আঘাত নিয়ে বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয় যাত্রীকে। ফলে বিপদের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। যেহেতু ট্রেনে এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, সেহেতু ট্রেনে প্রাথমিক চিকিৎসার সুব্যবস্থা প্রয়োজন।

প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে প্রায় ২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে গত এক বছরে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ৭৪টি। এই গুরুতর অপরাধে ট্রেন যাত্রীরা তো হতাহত হচ্ছেনই, এমনকি ট্রেনের চালক, সহকারী চালকসহ অনেকে আহত হচ্ছেন। পাথর নিক্ষেপে জানালা ভাঙচুরসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ট্রেনের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। অথচ, ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় এমন অপরাধের শাস্তির বিধান আছে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথা বলা আছে। আর কোনো রেলযাত্রী মারা গেলে ৩০২ ধারায় ফাঁসিরও বিধান আছে।

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের আইন থাকলেও আইন প্রয়োগ এখনও প্রায় শূন্যের কোঠায়। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ও রেলপথে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে কঠোর শাস্তিমূলক আইন প্রণয়ন এবং অতি দ্রæত কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। জনগণের ইচ্ছাশক্তি এবং প্রশাসনের সহযোগিতার মাধ্যমেই ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ থেকে শুরু করে নানা দুর্ঘটনা অনেকাংশে নির্মূল করা সম্ভব। নিরাপদ ভ্রমণ, নিরাপদ যাত্রাপথ আমাদের সবার কাম্য।

ইমাম হোসেন,

মীরসরাই, চট্টগ্রাম